নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আমি গৃহপলায়ন করি নাই। গৃহত্যাগ করিলাম। সত্যের সন্ধানে যাচ্ছি। আমাকে খোঁজাখুঁজি করে লাভ নেই। সত্যের মধ্যে সত্য আছে। কাজের ভেতরে কাজ আছে’।
এমন সব কথা চিরকূটে লিখে বাড়ি থেকে চলে গেছে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ কন্সটেবল মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোহায়মিনুল ইসলাম মোমিন। শুক্রবার রাতে মোহায়মিনুল ইসলাম এশার নামাজ পড়ার কথা বলে তাদের ভাড়া বাড়ি শহরের মনজিতপুর থেকে বেরিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিজ হাতে লেখা দীর্ঘ চিঠিতে মোহায়মিনুল ইসলাম (১৪) আরও লিখেছে ‘দীর্ঘকালে আমাকে কেহ চিনে নাই, জানে নাই আমার কাজকে। আজ হয়তো প্রভুর অনুমতিক্রমে আমার সময় শেষ। তাই চলিলাম। ইহা স্বাভাবিক। অন্তত: মুসলিমের পক্ষে। আমি সত্য লইয়াই আঁধার রাতে বাহির হইয়াছি’।
মোহায়মিনুলের বড় ভাই আবদুল আহাদ জানান সে অত্যন্ত চুপচাপ স্বভাবের ছেলে। তার কোনো বন্ধুও নেই । দুই একটি ছেলের সাথে সে স্কুলে যেতো। তিনি বলেন সে লেখাপড়ার পাশাপাশি সব সময় আল্লাহর পথ নিয়ে ভাবতো। কথা বলতো এবং কবিতা লিখতো। গোপালগঞ্জ সদরে বাড়ি তাদের উল্লেখ করে আবদুল আহাদ বলেন ক্লাসে তার রোল- ১।
সে আধ্যাত্মিক কথাবার্তা লিখে গেছে। প্রকৃতপক্ষে সে কোথায় গেছে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি বলেন এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে (নম্বর ৮৯৯) ।
মোহায়মিনুলের বাবা পুলিশ কন্সটেবল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আমার ছেলে নম্র ভদ্র স্বভাবের। সে কোনো চক্রের খপ্পরে পড়ে থাকতে পারে। জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে আমরা খুঁজছি। এখনও পাইনি।’
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ সরকার জানান, আজ শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পরই মোহায়মিনুলের বাবা পুলিশ কন্সটেবল মোস্তাফিজুর রহমান তার কাছে এসে জানান, তার ছেলের গৃহত্যাগের কথা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রধান শিক্ষক জানান ছেলেটি অত্যন্ত বিনয়ী নম্র ও ভদ্র স্বভাবের । তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তার লেখাপড়া আচরন শৃংখলা সবদিকই ছিল প্রশংসনীয়। তবে গৃহত্যাগের কারণ কি তা তিনি বলতে পারেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চিঠিতে যেসব কথা বলা হয়েছে তা আধ্যাত্মিক ভাষায়। তবে সে জঙ্গির পথ ধরেছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎমিশ জানান, ছেলেটির নিখোঁজ খবর শুনে আমরা সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যেয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে সে কোথায় এবং কেনো গেছে তার কোনো হদিস মিলানো যায়নি।