নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম অ্যাড. এ এফ এম এন্তাজ আলীর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৮ সালের ২৬ জানুয়ারি পবিত্র শবে কদরের রাতে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
এ এফ এম এন্তাজ আলী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ৭১ এর যুদ্ধকালীন সময়েও মুজিব বাহিনী সাতক্ষীরা মহাকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এড. এ এফ এম এন্তাজ আলী ৬ দফা আন্দোলনের (প্রথম দিনের আন্দোলনে) রাজধানী ঢাকার রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই আন্দোলনে সাবেক কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা ও সাবেক অর্থ মন্ত্রী মরহুম শাহ এস এম কিবরিয়া, সাতক্ষীরার অ্যাড. এ এফ এম এন্তাজ আলী ও মাখন মিয়া অন্যতম ছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে এবং তা জোরদার করতে অ্যাড. এ এফ এম এন্তাজ আলী তার নিজ জেলা সাতক্ষীয় চলে আসেন। এছাড়া তিনি ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির জেলার সভাপতি, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সময় ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ও ১৯৯৬ সালে জেলার আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তিনি সাতক্ষীরার সামাজিক, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মরহুম অ্যাড. এ এফ এম এন্তাজ আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে কখনও নীতিভ্রষ্ট হয়নি। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে আজীবন সেই নীতি ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছেন।
অ্যাড. এন্তাজ আলীর পারিবার অভিযোগ করে বলেন, “তার মৃত্যুর পর প্রায় ১২ দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে তার বাস ভবনে আসেন পরিবারকে সান্তনা জানাতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রবীণ এ নেতার মৃত্যুর পর থেকে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত সময় কোন শোক ও স্মরণ সভাও করা হয় না। এমনকি এ নেতার নামে আজ পর্যন্ত সাতক্ষীরার কোন সড়ক নামকরণ করা হয়নি। শহরের বিভিন্ন অলিগলির বিভিন্ন সড়কগুলো বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। এমনকি এক সময়কার মুসলিম লীগ নেতার নামেও নামকরণ করা হয়। শহরের পলাশপোল প্রাণ সায়ের খালের পাশের রাস্তাটি (পাকাপোল থেকে কাটিয়া বাজার ব্রীজ) অ্যাড. এন্তাজ আলীর নামে নামকরণ করার কথা থাকলেও তা ওই মুসলিম লীগ নেতার নামে রাস্তার নামকরণ করে। যেখানে দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের চিহৃ মূছে ফেলতে চাইলেও আজও পর্যন্ত শহরের এ সড়কটির মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা হয়নি।”
এমনকি সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম অ্যাড. এন্তাজ আলীর নামে বারবার নামকরণেরও দাবি জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী আ’লীগের সাবেক সাংসদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধার নামে সড়ক ও স্টেডিয়াম নামকরণ করা কেন হবে না এ আক্ষেপ আজও ওই পরিবারটিকে কুরে কুরে খায়। পরিবারের সদস্যরা আরো অভিযোগ করে বলেন, “জেলা আ’লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের কোন সংগঠনের কেউ এ ব্যাপারে আজও পর্যন্ত প্রতিবাদ করেনি, করেও না। এব্যাপারে এড. এন্তাজ আলীর পরিবার জেলা আ’লীগ, সদর এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও পৌর মেয়রের বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও আজও পর্যন্ত কেউ কোন কর্ণপাত করেনি। তাই মুক্তিযুদ্ধের এ পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীসহ সকল জনপ্রতিনিধি ও বর্তমান জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, আজ বাদ আসর পলাশপোল তেতুলতলা জামে মসজিদে মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত মিলাদ মাহফিলে সকলকে উপস্থিত হওয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট