আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এবার পুরুষের পাশাপাশি নেতৃত্ব দানকারী পদে থাকতে পারবেন নারীরাও। সোমবার সেনাবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা কার্যকর করার এমনই এক আদেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারের যুক্তিগুলোকে ‘বৈষম্যমূলক’, ‘অপ্রীতিকর’ এবং স্টেরিওটাইপ বা গৎবাঁধা ধারণার ওপর নির্ভরশীল বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি অজয় রাস্তোগির ডিভিশন বেঞ্চ জানান, সেনাবাহিনীতে নারীদের নিয়োগ একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এ নিয়ে কোনোরকম বৈষম্য চলবে না।
এনডিটিভি জানায়, এদিন সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
ঐতিহাসিক এ রায়ে একমাত্র কমব্যাট উইং ছাড়া সেনাবাহিনীর সব স্তরে আগামী তিন মাসের মধ্যে এই নিয়ম চালু করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রকে। সেখানে নারীরা যেন পুরুষদের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা পান, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন আদালত।
সোজা ভাষায়, নারী সেনা কর্মকর্তারা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতোই মেধার ভিত্তিতে কর্নেল বা তার ওপরের পদে পদোন্নতি পাবেন। শর্ট সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) আওতায় যে নারীরা ১৪ বছরের বেশি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, তাদের স্থায়ী কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালত।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা পরিষেবার বাইরে অন্য ভূমিকায় নারীদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৯২ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থায়ী কমিশনড অফিসার পদে অর্থাৎ ২০ বছর কাজ করার সুযোগ তারা পাননি। পদোন্নতি বা পেনশনের আশা বাদ দিয়ে শুধু ১৪ বছর কাজের সুযোগ পেয়ে আসছেন নারীরা ।
এ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করে সশস্ত্র বাহিনীতে যুদ্ধ করার এবং কমান্ডিং অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার অধিকার আদায় করেছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর ৫৭ জন নারী।
কিন্তু হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সেই আবেদন বিচারাধীন ছিল।
সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে শুনানি শুরু হলে আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি দেখায়, সেনাবাহিনীর সদস্যদের একটি বড় অংশ আসেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। তাই নারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালনের মতো উপযুক্ত মানসিকতা তাদের মধ্যে তৈরি হয়নি।
এমনকি দৈহিক গঠন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে মেয়েরা যুদ্ধ করার যোগ্য নন বলেও আদালতে দাবি করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। মাতৃত্ব, শিশু পরিচর্যা, যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষের হাতে ধরা পড়ার বিপদ ইত্যাদি প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়।
এর আগে, ২০১৮ এর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশনড পদে নারীদের নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব শাখায় এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে কি না, তা খোলসা করেননি তিনি।
এই মুহূর্তে শর্ট সার্ভিস কমিশনের আওতায় ১০-১৪ বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কাজের সুযোগ পান নারীরা। তবে এর আওতায় সেনা পরিষেবা বিভাগ, অস্ত্র কারখানা, শিক্ষা ও বিচার বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল, গোয়েন্দা এবং ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে তাদের।
কিন্তু পদাতিক বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, যন্ত্রনির্ভর বাহিনী এবং কামান বাহিনীতে যুদ্ধ করার সুযোগ নেই নারীদের। বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সব ক্ষেত্রেও এই সুবিধা নেই তাদের।