নিজস্ব প্রতিনিধি : ডাক্তারের অবহেলায় এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নাজমুল ক্লিনিকে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দায় এড়াতে মৃত্যুর খবর চেপে রেখে সোমবার দুপুর ১২টায় হার্ট ফেলিওরে মারা গেছে বলে তড়িঘড়ি করে লাশ ক্লিনিক থেকে বের করে দিয়ে সৎকার করতে বলা হয়েছে।
মৃতের নাম অনিমা কর্মকার (২৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা কর্মকারপাড়ার সঞ্জীব কর্মকারের স্ত্রী।
মাগুরা দাসপাড়ার সঞ্জীব কর্মকার জানান, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের হীরেন কর্মকারের মেয়ে অনিমা কর্মকারের সঙ্গে ২০১৩ সালে বিয়ে হয় তার। জয়ন্ত কর্মকার নামে সাড়ে পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে তাদের। তার অন্তঃস্বত্বা স্ত্রী অনিমাকে রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ভ্যানে করে শহরের পলাশাপোলের সাবেক সাংসদ ডাঃ মোখলেছুর রহমানের মালিকানাধীন নাজমুল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গর্ভে দু’টি ছেলে সন্তান থাকায় অস্ত্রপাচার ব্যতীত স্বাভাবিকভাবে প্রসব করানো যাবে না বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে পরামর্শ দেন। সিজারের জন্য ১০ হাজার টাকা তার কাছে চাওয়া হয়। ওইদিন সকাল ১০টা ১২ মিনিটে ডাঃ আশিক কওছার তার স্ত্রীর সিজার করান। প্রসব হওয়া দু’টি সন্তান ও মা সুস্থ ছিল। সন্তান প্রসবের পর তিনি বাড়িতে চলে আসেন। রোববার রাত ১০টার দিকে তার স্ত্রী মারা গেলেও সোমবার দুপুর ১২টায় সে মারা গেছে বলে চুক্তির টাকা না নিয়েই তড়িঘড়ি করে একটি এম্বুলেন্সে করে লাশ ও দু’নবজাতককে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ সময় লাশ তাড়াতাড়ি দাফন করার কথা বলেন তারা।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের একজন ডাক্তার জানান, নাজমুল ক্লিনিকে অনিমা কর্মকার নামের এক প্রসুতির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে তাকে ডাকা হয়। তিনি রোববার রাত ১০টার দিকে সেখানে পৌঁছান। যেয়ে দেখেন অনিমা কর্মকারের পেটটি ছিল বেশ ফোলা। তিনি যাওয়ার আগেই অনিমা মারা যায়।
জানতে চাইলে মৃতের বাবা হীরেন কর্মকার জানান, তার মেয়ের নিম্ন রক্তচাপ ছিল। সন্তান প্রসবের পর যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় রোববার রাত ১০টার দিকে তার মেয়ে মারা গেছে বলে তিনি তার জামাতার এক আত্মীয়ের কাছে জেনেছেন। মেয়েকে শেষবারের জন্য দেখতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সাতক্ষীরায় পৌঁছাতে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কায় সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছেন। সাতক্ষীরায় পৌঁছাতে রাত ১১টা বাজতে পারে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে নাজমুল ক্লিনিকে অনিমা কর্মকারের শরীরে অস্ত্রপচারকারি চিকিৎসক ডাঃ আশিক কওছার জানান, অস্ত্রপাচারে সন্তান জন্ম হওয়ার পর মা ও সন্তান উভয়েই সুস্থ ছিল। তবে হঠাৎ করে অনিমা কর্মকারের রক্তচাপ জনিত কারণে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে একটি কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে হার্ট ফেলিওর হয় তার।
এ ব্যাপারে নাজমুল ক্লিনিকের পরিচালক ডাঃ মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি তা রিসিভ করেরনি।#
পূর্ববর্তী পোস্ট