নিজস্ব প্রতিনিধি : নিয়ম নীতির কোন বালাই নেই সাতক্ষীরা পৌরসভার কসাই খানায়। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সপ্তাহে ৩ দিন গরু-ছাগল জবাই নিষিদ্ধ। এই আইন অমান্য করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিদিন ইচ্ছা মতো যত্রতত্র গরু ছাগল জবাই করছে। জবাইয়ের পূর্বে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই কোনো ডাক্তার। ওলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গোশতের দোকান। সাতক্ষীরা শহর পরিণত হয়েছে কসাই খানায়। ফলে শহরের গোশত বাজার থেকে ভয়াবহ রোগ সংক্রমণের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন মহলের নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভার একমাত্র কসাইখানা সুলতানপুর বাজারে অবস্থিত। কসাইখানায় প্রতিদিন গরু ছাগল জবাই চলছে। জবাইয়ের সময় প্রত্যেক মাংস বিক্রেতার লাইসেন্স ও জবাইকৃত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। সপ্তাহে চারদিন শুক্র, শনি, মঙ্গল ও বুধবারে জবাই করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বন্ধের দিন মাংস বিহীন দিবস রবি-সোম- বৃহস্পতিবারও সরকারি নিয়ম না মেনে জবাই করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেনারী সার্জন, কম্পাউন্ডার ইসমাইল ও ড্রেসার মোঃ আবুল হোসেন সমন্বয়ে একটি পশু স্বাস্থ্য পরীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয় এবং ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত জবাইখানায় পশু জবাইয়ের কথা। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের পশু কসাইখানায় পশু না এনে তাদের দোকানে, এমনকি জনবহুল রাস্তার ধারে তাদের ইচ্ছা মতো পশু জবাই করছে। এভাবে প্রতিদিন কত পশু বিভিন্ন জায়গায় জবাই হচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মীদের সহায়তায় এসব অনিয়ম হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। এ কারণে মানহীন ও পচা মাংস হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত গরু ও মহিষের গোশতও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। ছাগল জবাইয়ের ক্ষেত্রেও নেই কোন ভিন্নতা। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজের মতো করে নিজ নিজ দোকানে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ছাগল জবাই করছে, ভেড়া-বকরি ছাগল জবাইয়ের পরপরই হয়ে যাচ্ছে খাঁশি ছাগল। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোন কার্যক্রম নেই। সরকার কর্তৃক গৃহীত ¯¬াটার এ্যাক্ট মিট কন্টোল অনুসারে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছরের জেল থাকলেও তা কার্যকরী হচ্ছে না। এছাড়া ব্যবসায়ীরা তাদের নির্ধারিত মার্কেট ছেড়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও জনবহুল এলাকায় ইচ্ছা মতো গোশের দোকান স্থাপন করেছে। যার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে ইচ্ছামত গরুর মাংস কোথাও ৪শ, কোথাও ৫শ আবার কোথাও ৬শ টাকা দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খাসির মাংস ৫শ থেকে ৮শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, ক্ষুরা রোগ, ম্যাড কাউ, ল্যাম্পিজ, সোয়াইন ফ্লু, এ্যানথ্রাক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জনিত রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত গরু ছাগলের গোশত, রক্ত, লালা যে কোন মানব দেহে সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া পোল্ট্রি মুরগির দোকানও শহরের যত্রতত্র গড়ে ওঠেছে। সেখান থেকেও মাত্রাতিরিক্ত রোগ সংক্রমণের আশংকা রয়েছে। রাস্তার ধারে ধুলাবালি, পোল্ট্রি মুরগির জবাইকৃত বর্জ্য এবং যত্রতত্র মাংসের দোকান হওয়ায় স্বাস্থ্যনীতি ঝুকির মধ্যে নিপতিত হচ্ছে। মাংসের দোকানগুলো একই মার্কেটে প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।
গরু ছাগলের গোশত স্বাদে অতুলনীয়, পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। উচ্চ মাত্রার প্রাণীজ প্রোটিন। কোষ রক্ষণাবেক্ষণ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সুস্থ পশুর থেকেই উৎকৃষ্ট মাংস পাওয়া সম্ভব। এব্যাপারে সচেতন মহল, জেলা প্রশাসক মহোদয় ও পৌর মেয়র মহোদয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
সাতক্ষীরা শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদেরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগগুলো স্বীকার করেই বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বসাবসি করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
পূর্ববর্তী পোস্ট