আসাদুজ্জামান : অসহ্য গরম আর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারনে সাতক্ষীরায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনি সকাল থেকে শুরু হচ্ছে লোডশেডিং আর চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও পরবর্তী দুই ঘন্টা দেখা মিলছে না আর বিদ্যুতের। জেলার প্রায় সর্বত্রই এভাবে লোডশেডিং চলছে। অব্যহত লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার ছোট বড় শিল্প কলকারখানা গুলোতে উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মোট চাহিদার এক চর্তুথাংশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এই লোডশেডিং হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা-রাত, পিক অথবা অফপিক আওয়ারে রেহাই পাচ্ছে না লোডশেডিং থেকে। প্রতিদিন গড়ে জেলায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। লোড শেডিংয়ের কারণে জেলার বরফ কলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায়। জেলার বিদ্যুৎ নির্ভর হিমাগারগুলোতে ও একই অবস্থা বিরাজ করছে। অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে জেলার শিল্প কলকারখানা গুলোতে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় ৪৯ টি মৎস্য হ্যাচারী, ৯৫টি মৎস্য নার্সারী, ১৯টি মৎস্য প্রদর্শনী খামার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২টি সরকারী গলদা চিংড়ি হ্যাচারী । এসব মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গুলো সম্পূর্ন বিদ্যুৎ নির্ভর। বিদ্যুৎ ও বরফ ছাড়া সাদা মাছ ও চিংড়ি হিমায়িতকরণ সম্ভব নয়। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের শিকার হয়ে জেলার মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গুলো অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় ৪টি ছোট বড় হিমাগার রয়েছে। হিমাগার গুলোর মধ্যে বাঁকাল কোল্ড স্টোরেজ, ইটাগাছা সংগ্রাম কোল্ডস্টোরেজ। কাটিয়া কোল্ড স্টোরেজ এবং কলারোয়া কোল্ড স্টোরেজ। লোডশেডিং এর ফলে কোল্ড স্টোরেজ গুলো হুমকির মুখে পড়েছে । লোডশেডিং এর কারনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কৃষি জাত পণ্য সংরক্ষণের উপরও।
এদিকে, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোড শেডিং বন্ধসহ বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দূর্নীতি ও অর্থ বাণিজ্যের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, আশাশুনিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রোকনুজ্জামান জানান, সাতক্ষীরায় ওজোপাডিকোর আওতাধীন ৩০ হাজারের বেশী বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এজন্য চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের প্রয়োজন প্রায় ১৪ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচেছ মাত্র ৪ থেকে ৬ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদা মত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ চন্দ্র পাল জানান, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৬ টি সাব ষ্টেশনের আওতাধীন মোট ১৮ টি ফিডার রয়েছে। এসব ফিডারের আওতায় এক লাখ ৯ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এই ১৮ টি ফিডারে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৮ মেগাওয়াট। কিন্ত পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫ মেগওয়াট। অপরদিকে অফ-পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২৫ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট। ফলে কোন কোন ফিডারে ১২/ ১৩ ঘন্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবার জন্য বিনা কারণে বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজ, বাতি ও আলোক সজ্জা না করার জন্য বিদ্যুৎ অফিস থেকে সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট