অর্থনীতির ডেস্ক : মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেশের ৮০ শতাংশ পরিবার খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে ৬৪ শতাংশ পরিবার। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’র এক জরিপ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী : একটি খানা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) এ জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।
চরের ১০০টি, হাওরের ১০০টি, উপকূলের ১০০টি, বস্তির ৪০০টি, দলিত ১০০টি, আদিবাসী ৩০০টি, প্রতিবন্ধী ১৫০টি, অভিবাসী ১৫০টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ২০০টি পরিবারের থেকে তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এক হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর চালানো জরিপ প্রতিবেদনে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আয় ও সঞ্চয়, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ফিরে আসা অভিবাসী এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসন- প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের পর মানুষের আয় কমেছে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। বিপরীতে ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সঞ্চয় কমেছে ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এতে আরও বলা হয়, কোভিড সমস্যার কারণে ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ পরিবার খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে চরের ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাওরের ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, উপকূলের ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, বস্তির ৭৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, দলিত ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, আদিবাসী ৮৯ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ, অভিবাসী ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন।
অপরদিকে খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমিয়ে দিয়েছে ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ পরিবার। এর মধ্যে চরের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাওরের ৭০ দশমিক ৪০ শতাংশ, উপকূলের ৩৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, বস্তির ৬১ দশমিক ৬০ শতাংশ, দলিত ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ, আদিবাসী ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ৫৮ শতাংশ, অভিবাসী ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৭৪ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবার খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমিয়ে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিডকালীন ‘সামাজিক ত্রাণ তহবিল’ গঠন করার প্রস্তাব দেন।
এই ত্রাণ তহবিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি তদরকিতে এই সামিজক ত্রাণ তহবিল গঠিত হবে। ত্রাণ তহবিলের অর্থ সরকারি অনুদানের পাশাপাশি, বেসরকারি অনুদান থেকে আসবে।
দেবপ্রিয় বলেন, প্রথাগতভাবে আমাদের দেশে যারা বিপন্ন মানুষ, এটা (কোভিড-১৯) তাদের জন্য আরও দুর্যোগ টেনে এনেছে। আবার যারা বিপন্ন ছিলেন না, তাদের অনেকে এই ধাক্কাতে অসহায়ত্বের পর্যায়ে চলে গেছেন। শুধু ছোট ছোট প্রণোদনা না, এটাকে ২-৩ বছরের জাতীয় সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিতে হলে যে মানুষগুলো জনমানুষের কাছাকাছি থাকেন যেমন- স্থানীয় সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালীভাবে যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, মনুষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বিষয়ে বেশি সন্তুষ্টি রয়েছে। তারপর এসেছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধি। এরপর এসেছে প্রশাসন। সরকার হয় কোনো সচেতনাতার অভাব আছে অথবা তারা সচেতনভাবে এটাকে অস্বাীকার করার মনোভাবের ভেতরে আছে। এই অস্বাীকারের মধ্যে থাকলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট আরও দীর্ঘায়িত হবে।