প্রযুক্তির খবর : মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে অনিবন্ধিত বা অবৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে সরকার। এখন থেকে বৈধভাবে আমদানি হোক অথবা অন্য কোনোভাবে আসুক, তা গ্রাহক ব্যবহার শুরু করলে আর বন্ধ হবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, আমরা আগে যে ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার-এনইআইআর) প্রক্রিয়াটি চালু করেছিলাম তাতে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সে কারণে আমরা স্থানীয় সিম ব্যবহার করা যেকোনো মোবাইল ডিভাইস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এর অর্থ হলো মুঠোফোন বৈধভাবে আমদানি হোক অথবা অন্য কোনোভাবে আসুক, তা গ্রাহক ব্যবহার শুরু করলে আর বন্ধ হবে না। এত দিন বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সচল হওয়ার পর তা শনাক্ত করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
দেশে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি শাওমির ফোন ব্যবহার করেন। এই ফোন অবৈধভাবে এনে মার্কেটে বিক্রির অভিযোগ ছিল বিস্তর। দেশে আজ শাওমির ফোন উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন করা হয়েছে। কারখানা স্থাপনের ফলে অবৈধভাবে এই ব্রান্ডের ফোন আসা কমবে। এছাড়াও এখন থেকে গ্রাহকরা আগের চেয়ে কম দামে শাওমির বিভিন্ন ফোন কিনতে পারবেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এরই মাঝে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল।
দেশে গত ১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার ব্যবস্থা চালু হয়। ১ অক্টোবর থেকে ব্যবস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে বিটিআরসি।
ব্যবস্থাটি চালুর পর অবৈধভাবে আনা মুঠোফোন শনাক্ত করা হচ্ছিল। সেসব মুঠোফোন প্রমাণ দিয়ে নিবন্ধনের জন্যও বলা হচ্ছিল। তবে সাধারণ মানুষেরা বিদেশ থেকে নিয়ে আসা ও উপহার হিসেবে পাওয়া মুঠোফোন নিবন্ধনে ভোগান্তির কথা বলছিলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখনো বাজারে বিক্রি হওয়া মোট ফোনের ৭০ শতাংশ ফিচার ফোন। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। তাদের জন্য নিবন্ধন একটি ভোগান্তির কাজ। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ জানে না কীভাবে মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর (শনাক্তকরণ নম্বর) দিয়ে বৈধ-অবৈধ যাচাই করতে হবে।’
মন্ত্রী জানান, এসব বিষয় নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি (উপদেষ্টা) মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বিকাশের জন্য মুঠোফোনের ব্যবহার আরও বাড়ানো দরকার। সেখানে যদি দেখা যায় মুঠোফোনের নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তির কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা আরও বড় ক্ষতি।
এনইআইআর ব্যবস্থার মাধ্যমে মুঠোফোনের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাইলে বৈধ-অবৈধ ফোন সম্পর্কে বিটিআরসি তথ্য দিতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
নকল বা একই আইএমইআই নম্বরে থাকা একাধিক সেটের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সে বিষয়ে পরে জনভোগান্তি এড়িয়ে কী করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একজন বৈধ আমদানিকারকের কাছ থেকে সরকার আমদানি শুল্ক হিসেবে প্রতিটি মোবাইল ফোনের বিপরীতে ৩ হাজার টাকা পায়। কিন্তু অবৈধভাবে কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বা কেনা হলে সরকার রাজস্ব হারায়।