বিদেশের খবর: ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ষষ্ঠ দিনের মতো অব্যাহত আছে। এতে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমাদেশগুলোতে ইউক্রেনের প্রতি মানুষের সমর্থন অব্যাহত আছে। অর্থাৎ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে আগ্রাসন বলে তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোও বেশ গুরুত্ব দিয়ে ইউক্রেনের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিসহ সেখানকার নাগরিকদের বীর হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
কিন্তু অন্যান্য যুদ্ধ কিংবা আগ্রাসনের (ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার) ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোকে ভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে। এজন্য এরই মধ্য তাদের এ ধরনের দ্বৈত নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালায় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টে ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের পর সেখানে তিনদিক থেকে হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। যা এখনো অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে কিয়েভ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাবেন পুতিন। এর আগে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় মাসব্যাপী সামরিক মহড়া চালায় মস্কো।
ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলার পর তিন শিশুসহ ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের অধিকাংশই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে।
তবে পুতিনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। রাশিয়ার ব্যাংক, তেল শোধনাগার, সামরিক সরঞ্জামকে লক্ষ্য করে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে নিন্দায়ও সরব দেশগুলো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও ঘন ঘন জরুরি বৈঠকে বসছে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা অন্যান্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। অর্থাৎ ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধকে যেভাবে দেখানো হয়েছে তার ঠিক বিপরীতভাবে দেখানো হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধকে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পশ্চিমাদের এমন নীতির সমালোচনা করছেন।
অনেক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নীতির অভিযোগের তীর ছোড়া হচ্ছে। কারণ রাশিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াই বা প্রতিরোধকে কেবল প্রশংসার চোখেই দেখা হচ্ছে না বরং কীভাবে এমন সভ্য দেশের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
কিয়েভের সিবিএস নিউজের সিনিয়র সংবাদদাতা চার্লি ডিআগাতা শুক্রবার বলেন, যথাযথ সম্মান জানিয়েই বলছি, এটা (ইউক্রেন) ইরাক কিংবা আফগানিস্তান নয়, যেখানে দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ চলছে। এটি একটি অপেক্ষাকৃত সভ্য ও অপেক্ষাকৃত ইউরোপীয় দেশ। এ শহরে যা ঘটছে সেটা প্রত্যাশিত নয় বলেও জানান তিনি।
তার এমন বক্তব্যের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাদের অভিযোগ, চার্লি ডিআগাতার এমন বক্তব্য অশ্বেতাঙ্গ ও ইউরোপের বাইরের মানুষের জন্য আরও ভোগান্তি তৈরি করবে। পরে অবশ্য এমন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার স্কাই নিউজ মধ্য ইউক্রেনের শহর ডিনিপ্রোর একটি ভিডিও সম্প্রচার করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেকে মোলোটভ ককটেল তৈরি করছে। একই সঙ্গে এটিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমন সংবাদ পরিবেশনের পর সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেন, রাশিয়ান সেনাদের প্রতিরোধে ইউক্রেনের নাগরিকদের ভূমিকাকে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যম কতটা সুন্দরভাবে কাভারেজ করছে! যদি তারা ইয়েমেন বা ফিলিস্তিনের বাদামী মানুষ হতো তাহলে তাদের সন্ত্রাসী হিসাবে অভিহিত করে ড্রোন হামলা চালানো হতো বলেও মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।
ফ্রান্সের সংবাদভিত্তিক কেব্ল চ্যানেল বিএফএম টিভির সাংবাদিক ফিলিপ কোরবে বলেন, ‘পুতিন সমর্থিত সিরীয় সরকারের বোমা হামলা থেকে পালাতে যাওয়া সিরীয়দের নিয়ে আমরা এখানে কথা বলছি না। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়িতে করে সরে যাওয়া ইউরোপীয়দের নিয়ে কথা বলছি আমরা।
এদিকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ড্যানিয়েল হান্নান দ্য টেলিগ্রাফের একটি নিবন্ধের জন্য অনলাইনে সমালোচিত হয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, যুদ্ধ দরিদ্র ও প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীতে ঘটে না।