কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটার ফসলের মাঠে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সরিষা ফুলের সমারোহ। চারিদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। কৃষকেরা এবছর বোরো আবাদের আগে এই সরিষার চাষ করে নিজেদের তেলের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি টাকায় আশায় এই সরিষার আবাদ করেন। এছাড়া সরিষা থেকে তেলের পাশাপাশি সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধে মধু সংগ্রহ করতে উড়তে দেখা যাচ্ছে মৌমাছিদের। মৌয়ালরা সরিষা ক্ষেতের পাশে বাক্স রেখে মৌমাছিদের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর দেবহাটা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেবহাটায় ১১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যেখানে গত ৫ বছর আগে চাষ হতো মাত্র ৮ থেকে ৯ হেক্টর। কয়েক বছরের ব্যবধানে সরিষার আবাদ বেড়েছে। চাষের সময় আর খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দিন দিন বাড়ছে সরিষার চাষ। মূলত সয়াবিনের উচ্চ মূল্যের কারণে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে সরিষার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কয়েক বছরে বেশকিছু নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিনার সরিষা হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১ দশমিক ৮ টন। জীবনকাল মাত্র ৮৭ দিন। বাড়তি ফলন ও কম সময়ের কারণে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
অপরদিকে বাজারে দাম ভালো দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা। বাজারে সরিষা ফুল ও সরিষা শাকেরও চাহিদা বাড়ছে। ফলে ফুল ও শাক বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করছেন অনেকে।
দেবহাটা উপজেলার কোড়া গ্রামের কৃষক মোবারক আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৫-৭ মণ করে সরিষার ফলন হবে। প্রতি বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
দেবহাটা কৃষি উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, ‘দেশের বর্তমান ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আনতে হয়। এতে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে ৫০ ভাগ তেল উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমাতে ৩ বছর মেয়াদী রোডম্যাপ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ১১ হেক্টর জমিতে টরি-৭, বারি সরিষা-১৪, বিনা সরিষা- ৯ ও ১১ এবং জটাই (স্থানীয় জাতের সরিষা) এই ৪ প্রকারের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এবছর ১৯৯৫ টন সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান। এছাড়া মৌ বক্সেও মাধ্যমে ১০ টর মধু সংগ্রহ হবে বলে তিনি জানান। দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, চাষীরা যাতে সহজে ঋন নিয়ে চাষাবাদ করতে পারে সেজন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ খেকে চাষীদেরকে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।