নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় মৎস্যঘের দখলের জেরে গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে দেবহাটার খালিষাখালীতে এঘটনা ঘটে। নিহত কামরুল ইসলাম (৫০)।
এ সময় সেনাবাহিনী আরও ছয়জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের কাছ থেকে ৫৪টি হ্যান্ড গেনেডসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে। নিহত কামরুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালী গ্রামের বকর গাজীর ছেলে।
আটককৃতরা হলো, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের মো: নূরুজ্জামান, একই গ্রামের মো: মেহেরাব, কাশিবাটি গ্রামের হাসিবুল হাসান, বড় কাশিবাটি গ্রামের রবিউল আওয়াল, আশাশুনি সদরের মো: সোহেল ও দেবহাটা বদরতলা গ্রামের হোসেন ফকির।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী দেবহাটা উপজেলার ভ‚মিহীন পল্লী হিসেবে পরিচিত খলিষাখালীর মৎস্যঘেরে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে কয়েকজন। ওই সময় স্থানীয়রা কামরুল ইসলামকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন বলছেন, এক হাজার ৩১৮ বিঘার ওয়ারেশহীন জমিতে চার শতাধিক জমিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। গত ৫-৬ মাসে কয়েকবার জমির মালিক দাবিদার ও ভ‚মিহীনদের মধ্যে দখল ও বেদখলের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর চার শতাধিক ভ‚মিহীন পরিবার ওই জমি দখল নিয়ে বসবাস করে শুরু করে। পরে জমির মালিকরা ওই জমি আবার দখলের চেষ্টা করে আসছিল। তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনীর অভিযানের একপর্যায়ে কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের লোকজন তার স্বামী কামরুল ইসলামকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মাদ বলেন, ৫ আগস্টের পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খলিষাখালীতে ভ‚মিহীন নামধারী একটি ভ‚মিদস্যু দল ওই এলাকায় ঘের দখল করে মহড়া দিতে থাকে। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে খলিষাখালিতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে জানান গণপিটুনিতে কয়েকজন আহত হয়েছে। আহত কামরুল ইসলাম নামের একজকে উদ্ধার করে দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যেয়ে তাকে মৃত্যু অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেউ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অভিযোগ করেনি।
সাতক্ষীরা সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, খলিষাখালীর আকরাম, গফুর, কামরুলের নেতৃত্বাধীন একটি ডাকাত দলের কাছে অস্ত্র আছে-এমন খবরে সেনাবাহিনী শুক্রবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের খবর পেয়ে ভ‚মিহীন নামধারী ভ‚মিদস্যুরা নারীদের দিয়ে তাদের গাড়ির সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি তাদের কাজে বিঘœ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ভূমিসদ্যুরা তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমা বি¯েফারণ ঘটনায়।
আরও জানানো হয়. এ সময় স্থানীয় দেড় শতাধিক মানুষ বোমা বিস্ফোরণ ঘটনানো ভ‚মিদুস্যু কামরুল ইসলামকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয়। আহত অবস্থায় তারা তাকে উদ্ধার করে দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
ঘটনাস্থল থেকে ছোট ও বড় ৫৪ টি হ্যান্ড গ্রেনেড, পাঁচটি রাম দা, ৮০০ গ্রাম গান পাউডার, চারটি মুঠোফোনসহ বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ছয়জন ডাকাতকে।
কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম জানান, তার কোনো লোকজন খোলিষাখালী যায়নি। তিনি শুনেছেন গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে।
#