ভারতের নারীরা প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গরুর মুখোশ। সম্প্রতি ভারতের নানা জায়গায় গরুর মুখোশ পরা নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্ডিয়া গেট, কলেজের ক্লাশরুম, ট্রেনের কামরা বা এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে নারীর তোলা এসব ছবি দেখা যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর মুখোশ ভারতে নারীর প্রতি অবহেলা বা নারী কতটা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২৩ বছর বয়সী ভারতীয় ফটোগ্রাফার সুজাত্র ঘোষ এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট শুরু করেন। তিনি এর মাধ্যমে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চেয়েছেন, তা হলো ভারতের মেয়েরা কি গরুর চেয়েও অধম। এখানে নারীর চেয়ে গরু বেশি নিরাপদ।
তিনি বলেন, আমার দেশে মেয়েদের তুলনায় গরুকে যে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, সেটা দেখে আমি বিচলিত। এখানে একজন মেয়ে ধর্ষিতা বা লাঞ্ছিত হবার পর বিচার পেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত বিচার পায় একটি গরু। কারণ হিন্দুরা এই গরুকে পবিত্র মনে করে।
https://www.youtube.com/watch?v=82yyHp6sA6I
ভারতে প্রতি পনের মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। এ ধরণের খবরের জন্য প্রায়ই ভারতে সংবাদ শিরোনাম হয়। সুজাত্র ঘোষ বলেন, এসব অপরাধের মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। অথচ যখন একটি গরু জবাই করা হয়, তখন হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো গিয়ে তখনই সন্দেহভাজনদের ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
তিনি আরো বলেন, এই হিন্দু গোরক্ষা গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা এবং তাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই এই অভিনব ফটোগ্রাফির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করি। ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরু নিয়ে সমাজে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিভেদ।
গত দু’ বছরে তথাকথিত হিন্দু গোরক্ষকদের হাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র গুজবের ওপর ভিত্তি করে মুসলমানদের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। এমনকি গরুর দুধ পরিবহনের জন্য পর্যন্ত মুসলমানদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এক সফরের সময় সেখানকার এক পার্টি শপ থেকে কিছু গরুর মুখোশ কেনেন সুজাত্র। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি এই ফটোগ্রাফি সিরিজের জন্য ছবি তুলতে শুরু করেন।