নিজস্ব প্রতিবেদক : তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার সরুলিয়া ইউনিয়নের কোন না কোন জায়গায় প্রতি রাতেই বসছে জমজমাট জুয়ার আসর। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চুরি-ডাকাতিসহ এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৫ দিন যাবত সরুলিয়া এলাকায় জমজমাট জুয়ার আসর বসলেও স্থানীয় প্রশাসন কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কয়েক জন জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এলাকার একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ওই জুয়ার আসর বসাচ্ছে। প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকার খেলা হচ্ছে সেখানে। এই এই টাকার ভাগ পাচ্ছে আইনের রক্ষকরা। তাহলে কে রুখবে এই জুয়ার আসর?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টা থেকে ভোর রাত ৪ টা পর্যন্ত সরুলিয়া স্লইজ গেট (জিল্লার বাড়ির পাশে) এলাকায় বসে জুয়ার আসর। সরুলিয়া ইউনিয়নের খোদ্দ গ্রামের জনৈক আলম, একই গ্রামের শফি ও পাশ্ববর্তী চৌগাছা গ্রামের বারী ওই জুয়ার বোর্ড চালাচ্ছে বলে জানাগেছে। তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে পাচ্ছে না। তারা জানান, যশোর, খুলনা, কলারোয়া, শার্শা, মনিরামপুর,কেশবপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়া খেলার জন্য মানুষ আসছে।
এলাকাবাসী আরো জানান, মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও পাটকেলঘাটা থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করার পরেও কোন ফল হয়নি। প্রতিরাতের ন্যায় চলেছে জুয়ার জমজমাট আসর। ফলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি পাশ্ববর্তী কাটাখালি, কুমিরাসহ ওই এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙাখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলেও জুয়া বন্ধে থানা পুলিশ কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তাদের অভিযোগ। তারা জানান, বর্তমান পাটখেলঘাটা থানার ওসি মহিবুল ইসলাম কাউকে কেয়ার করেন না। কারো কথা তিনি শুনতে বা মানতে চান না। যা ইচ্ছে তাই করছেন।
অভিযোগ রয়েছে থানা পুশিলকে ম্যানেজ করে এ ধরনের জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে পাটকেলঘাটার কোন না কোন জায়গায়।
এ ব্যাপারে সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, কয়েক দিন ধরে শুনছি এলাকায় না-কী জুয়ার আসর বসছে। আমি পাটকেলঘাটা থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু দেখছি এখনও বন্ধ হয়নি। জুয়ার আসর যাতে আর না বসে সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওই জনপ্রতিনিধি।
পাটখেলঘাটা থানার ওসি মহিবুল ইসলাম জানান, শুনেছি জুয়ার আসন না-কি বসছে। দেখি, খোঁজ-খবর নিচ্ছি। জুয়ার আসর বসলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো: আলতাফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, “বিষয়টি আমার নলেজে নেই। এলাকার সচেতন মহল মঙ্গলবার রাতে আপনার সাথে এনিয়ে কথা বলেছিলেন কী-না জনাতে চাইলে তিনি বলেন, কথা বললে কি আর জুয়ার আসর বসতো। ঠিক আছে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো: মহিউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে এ বিষয়ে ফোন করেছিল। তিনি বলেন, আগেও আমার কাছে খবর আসার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবারও ওই এলাকায় বসছে জুয়ার আসর। এর সাথে স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত বলে জানতে পেরেছি। পুলিশ সবই জানে। আমি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। আজ থেকে এলাকায় জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলবে। তিনি আরও বলেন, এরপরেও বন্ধ না হলে আমি বিষয়টি পরবর্তী জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উথ¥াপন করবো।
পূর্ববর্তী পোস্ট