তালা ডেস্ক : সোনালী ব্যাংক লি. তালা শাখার ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরস্পর যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা লুটের ঘটনার শিকার হয়েছে দরিদ্র এক কৃষক। শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম (ইডিএস) হিসাবের গ্রাহক তালার হরিশ্চন্দ্রকাঠি গ্রামের মৃত. হরিপদ মন্ডলের ছেলে সুজিত মন্ডলের ৮০ হাজার টাকা কৌশলে তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জালিয়াতির ঘটনা জানার পর ভুক্তভোগী সুজিত মন্ডল ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজারের নিকট ঘটনার প্রতিকার চাইলেও তিনি কোনও প্রতিকার পাননি। এমনকি ব্যাংক ম্যানেজার ভবেশ চন্দ্র মৃধা সুজিতকে এখন নানাভাবে হয়রানী করছে এবং ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আত্মসাৎকৃত টাকার দায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক সুজিত মন্ডলের উপর চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এঘটনায় ব্যাংকের গ্রাহকেদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী সুজিত মন্ডল জানান, বিগত ১৪/০৭/২০০৮ তারিখে তিনি তার নিজ নামে সোনালী ব্যাংক লি. তালা শাখা, তালা- সাতক্ষীরাতে একটি শিক্ষা সঞ্চয় স্কীম (ইডিএস) হিসাব খোলেন। যার হিসাব নং : ৩৬০০০০৬৩৯, পাশ বই নং : ৪৯১৬০। ১০ বছর মেয়াদী উক্ত হিসাবে প্রতি মাসে ১০০০ হাজার টাকা করে চলতি জুলাই- ২০১৭ পর্যন্ত তিনি নিয়োমিত টাকা জমা প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায় গত ১২/০৭/১৭ ইং তারিখ দুপুর অনুমান ০২ টা ০৯ মিনিটে তালা সোনালী ব্যাংক এর ম্যানেজার টেলিফোন (টেলিফোন নং : ০৪৭২৭ ৫৬১০৭) থেকে সুজিত মন্ডলের মোবাইল ফোনে (মোবাইল নং : ০১৭২৯ ৭৪৬৩৮১) ফোন করে ব্যাংকে এসে দেখা করতে বলে। সেমতে ওইদিন বিকাল অনুমান ৪ টার সময় সুজিত মন্ডল তালা সোনালী ব্যাংকে যেয়ে ম্যানেজার এর সাথে দেখা করলে ম্যানেজার ভবেশ চন্দ্র মৃধা তাকে জানায় বিগত ০৪/০৪/১৭ ইং তারিখে সুজিত মন্ডল তাঁর ইডিএস হিসাব এর জমাকৃত টাকার বিপরীতে ৮০ হাজার টাকা লোন উত্তোলন করেছেন। ম্যানেজারের একথা শুনেই সুজিত হতভম্ভ হয়ে যায়। কারন তিনি কখনও তার হিসাবের বিপরীতে বা ব্যাংক থেকে অন্য কোনও লোন উত্তোলন করেননি। পরবর্তিতে সুজিত মন্ডল ম্যানেজার নিকট লোন উত্তোলনের আবেদন ফরম এবং লোন উত্তোলনের দিনকার ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলে ব্যাংকের ম্যানেজার তাকে সহযোগীতা প্রদান না করে লোনের টাকা পরিশোধের কথা বলেন। এদিকে এপ্রিল মাসে লোন তোলার পর জুন মাস পর্যন্ত উক্ত লোনের জন্য ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার টাকা সুদ হিসাব করে তা’ ক্ষতিগ্রস্থ সুজিত মন্ডলের উপর চাঁপানো হয়েছে।
সুজিত মন্ডল আরো বলেন, তিনি কখনও তাঁর ইডিএস হিসাব সহ অন্য কোনও ভাবে ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন করেননি। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁর স্বাক্ষর জাল করে লোন হিসেবে টাকা উঠিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সুজিত মন্ডল তালা থানায় একটি জিডি (৪৬৩, তাং : ১৩/০৭/১৭ ইং) করেছেন। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রতিকার পেতে দরিদ্র কৃষক সুজিত মন্ডল- দুদক, বাংলাদেশ বাংক ও সোনালী ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংক তালা শাখার প্রায় অর্ধ শত ইডিএস, ডিপিএস ও ডিপোজিট আমানতকারীদের হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরস্পর যোগসাজসে লক্ষ লক্ষ টাকা লোন হিসেবে উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করে। এবিষয়টি জানাজানি হবার পর থেকে ব্যাংকের এক কর্মচারী স্বপরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা উঠিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে আমানকতারী গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জনগনের বিশ্বস্ত সোনালী ব্যাংকে টাকা রাখার পর তা আত্মসাৎ হয়ে যাওয়া এবং টাকার নিরাপত্তা না থাকায় গ্রাহকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক্ষতিগস্ত গ্রাহকরা ঘটনার সুষ্ঠ প্রতিকার এবং তদন্ত দাবী করলেও ব্যাংকের ম্যানেজার তা না করে গ্রাহকদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার করছে এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আত্মসাৎকৃত টাকার সুদসহ হিসাব গ্রাহকদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এতে ভুক্তভোগী গ্রাহকসহ তালাবাসীর মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট