নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতির ফিল্টার শামুক কমে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় বলে মনে করেন সাতক্ষীরার ৮৯ ভাগ মানুষ। আর শামুক কমে যাওয়ার পিছনে প্রজনন মৌসুমে শামুক ধরা ও বিক্রি, মাছের খাদ্য হিসেবে ও চুন তৈরিতে ব্যবহার, ডিমওয়ালা শামুক নিধন, শামুকের আশ্রয়স্থল তথা জলাশয় কমে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ নানা কারণকে দায়ী করে শামুক রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি সাতক্ষীরায় বারসিক ইনস্টিটিউট অব এ্যাপ্লাইড স্টাডিজ পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মানুষ শামুককে প্রকৃতির বন্ধু হিসেবে কতটা চান এবং শামুক কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান; প্রেক্ষাপট সাতক্ষীরা’ শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস এ্যান্ড ডালায়গ এই তথ্য জানানো হয়।
এ সময় মাল্টিমিডিয়ায় গবেষণাপত্রের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন গবেষক ও সাংবাদিক শেখ তানজির আহমেদ এবং গবেষক আসাদুল ইসলাম।
এতে বলা হয়, প্রকৃতির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বন্ধু হলেও শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে জেলার ১৮ ভাগ মানুষের কোন ধারণা নেই। বাকি ৮২ ভাগ মানুষের ধারণা থাকলেও এই ৮২ ভাগের মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৩ ভাগের ধারণা প্রত্যক্ষ ধরনের। অর্থাৎ তারা শামুক দ্বারা দৃশ্যত যেসব উপকার পান, যেমন হাসের খাদ্য বা ঘের মাছের খাদ্য হিসেবে ও চুন তৈরিতে ব্যবহার, মুরগির খাদ্য তৈরি, শামুক বিক্রি করে ও শামুক ভেঙে জীবিকা অর্জনকে বােঝান। আর ওই ৮২ ভাগের মধ্যে পৃথকভাবে পরোক্ষ অর্থাৎ শামুককে পরিবেশের বন্ধু ভাবেন ৫৮ দশমিক ৫৩ ভাগ মানুষ। এক্ষেত্রে পানি পরিষ্কারক, পানির মিষ্টতা পরীক্ষা, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, রােগের ওষুধ, সাপ ও অন্যান্য প্রাণির খাদ্য হিসেবে শামুক প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকা রেখে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখেন বলে মনে করেন তারা।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, জেলার ৮ ভাগ মানুষ মনে করেন শামুক কমে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। আর ৩ ভাগ মানুষ ক্ষতি সম্পর্কে জানেন না। বাকী ৮৯ ভাগ মানুষের মত, শামুক কমে যাওয়ার কারণ প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে তারা মাছ ও হাঁসের খাদ্য কমে যাওয়া, পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া, মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়া, পানিতে রোগ জীবাণু বৃদ্ধি, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়া, দেশীয় মাছ কমে যাওয়াসহ সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
গবেষণাপত্র শামুক রক্ষায় প্রত্যেক ঘের মালিককে নিজ ঘরের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়ােজনীয় শামুক চাষ উৎসাহিত করা, ফসল উৎপাদন কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, প্রজনন মৌসুমে (জুন-আগস্ট) শামুক ধরা নিষিদ্ধকরণ, কেউই যাতে অন্যের জলাশয়ের শামুক ধরতে না পারে সেজন্য ছোট ছোট সাইনবোর্ড স্থাপন, সরকারের কৃষি বা মৎস্য বিভাগের সাইন বোর্ডগুলোতে শামুকের উপকারিতা তুলে ধরে বিভিন্ন শ্লোগান লিপিবদ্ধকরণ, সরকারিসহ সকল বেসরকারি উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, মাঠ দিবসের মতো কর্মসূচিতে শামুক রক্ষার আহবান জানানাের উদ্যােগ গ্রহণ, প্রকাশ্য শামুক ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা, লবণাক্ততা কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ, সর্বোপরি জনসচেতনতা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।
সংলাপে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাংবাদিক মােস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, অসীম বরণ চক্রবর্তী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শাহীন ইসলাম প্রমুখ।