নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% হিসাব থেকে এক কোটি টাকা হস্তান্তর করেছেন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। যৌথ একাউন্ট বদলে একক স্বাক্ষরে গত এক বছরে এ টাকা ঘস্তান্তর করা হয়। গত ৩১ জুলাই তালা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি সামনে আসলে আলোচনার ঝড় ওঠে।
সরকারি নীতিমালা থেকে জানাযায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের ইপ শাখা কর্তৃক জারীকৃত ২০০৫ সালের নীতিমালায় অনুসারে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% হিসাবে প্রাপ্ত টাকা ব্যয়ের জন্য স্থানীয় তফসীল ভূক্ত যে কোন ব্যাংকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর সংক্রান্ত একটি হিসাব খুলবেন। উক্ত হিসাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী জমাকৃত অর্থ উপজেলাধীন সকল ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বণ্টন করবেন। নীতিমালা মেনে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তালা সোনালী ব্যাংকে কর হিসাব নামে একাউন্টটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হতো। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৬ মে’র পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার যৌথ একাউন্ট বদলে একক স্বাক্ষরে উক্ত একাউন্ট পরিচালিত করেন। ২০১৭ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত একক স্বাক্ষরেই এ হিসাবটি পরিচালিত হয়। যার হিসাব নং-১৭০২।
হিসাব বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ মে থেকে ২০১৭ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% হিসাব একাউন্ট থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একক স্বাক্ষরে এক কোটি ৭ লাখ টাকা ঘস্তান্তর করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সব্বোর্চ ১৪ লাখ টাকা এবং সর্বনি¤œ ৭৩ হাজার ৮৩ টাকা এক চেকের মাধ্যমে ঘস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই তালা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উক্ত হিসাব একক ক্ষমতায় পরিচালনার বিষয় এবং এস্টিমেট তৈরি না করার বিষয়ে আলোচনা হয়। যে সব ইউনিয়নকে দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে এস্টিমেট না করে কাজ শেষ করেছেন। সমন্বয় সভায় তালা উপজেলার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% হিসাবের টাকা খরচ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে মাগুরার ইউপি চেয়ারম্যান গনেশ দেবনাথ বলেন, কিছু বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু এস্টিমেটের অভাবে কাজ পেন্ডিং রয়েছে।
এ বিষয়ে তালা উপজেলার জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, বরাদ্দ পেয়েছি। আমি এস্টিমেট করে কাজ শেষ করেছি। তবে তিনি কি পরিমাণ বরাদ্দ পেয়েছেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু বলেন, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% এর কিছু বরাদ্দ পেয়েছি। ইতোমধ্যে কাজ শেষ করেছি। কিন্তু এখনও বিল পরিশোধ করতে পারছি না। উপজেলা প্রকৌশলী কাজের এস্টিমেট না করে দেওয়ায় বিল উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তালা সোনলী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ভবেষ চন্দ্র মৃধা বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, এটি উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব একাউন্ট, তাই তার স্বাক্ষরেই এ একাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে।
তালা উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসীম বলেন, বিগত দিনে সরকারি পরিপত্র অনুসারে একাউন্টটি পরিচালিত হতো। কিন্তু গত এক বছর সরকারি পরিপত্রের তোয়াক্কা না করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একক স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা হস্তান্তর করা হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করেছি।
তালা উপজেলা চেয়াম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুসারে একাউন্টটি যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার একক স্বাক্ষরে একাউন্টটি পরিচালনা করে গত এক বছরে প্রায় কোটি খানেক টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ৩১ জুলাই তালা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় এবিষয়ে আলোচনা উঠলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন সঠিক উত্তর দেন নি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন বলেন, টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন মূলক কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য। নীতিমালা অনুসারে এ টাকা খরচ করা হবে। তবে একক স্বাক্ষরে টাকা হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
পূর্ববর্তী পোস্ট