নিজস্ব প্রতিবেদক : যেখানে সরকারসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাল্য বিবাহ বন্ধ করার বিষয় নিয়ে সামাজিক গণআন্দোলন গড়ে তুলছে, জনপ্রনিধিদের সার্বক্ষণিকভাবে সরকার ও সামাজিব প্রতিষ্ঠানগুলো বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে গণসচেতনা সৃষ্টির আহবান জানাচ্ছে এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছেন- সেখানে সাতক্ষীরার বৈকারীতে স্বয়ং ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বরের সহযোগিতায় আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হলে ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ মেম্বর, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বররা সহযোগিতাকারী ওই মেম্বরকে গালি-গালাজ করে তিরষ্কার করে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি নাবালক ও নাবালিকার বয়স বৃদ্ধি করার ভূয়া এভিডেবিড এর কপি উদ্ধার করেছে। বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপিত হলেও প্রতিকার হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের মাঝের পাড়া (৫নং ওয়ার্ড) গ্রামের আফসার গাজীর শিশু কন্যা তানিয়া খাতুন(১৪) এর সাথে একই গ্রামের আব্দুর মুজিদ এর ছেলে আব্দুল হান্নান(১৯) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রামের লোকেরা একত্রিত হয়ে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড মেম্বর আনসার আলীর বাড়িতে এক শালিস বৈঠকে মিলিত হয়। শালিসে কন্যা তানিয়া ও হান্নানের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। শালিসে ছেলে ও মেয়েকে বিবাহ দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই গ্রামের আব্দুর রউফ, আমজের আলীসহ গ্রামবাসীরা জানায় এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ১১ জুলাই ২০১৭ তারিখ বয়স বৃদ্ধির একটি ভূয়া এভিড এভিড করে তাদের বিবাহ দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী আরো জানায়, মেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় যে কোন অজুহাতে বিবাহ বন্ধ করার জন্য ছেলের (হান্নান) পরিবারের পক্ষ থেকে আনসার মেম্বরকে ৬৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অপর দিকে এই মেয়েকে ওই ছেলের সাথে বিবাহ দেওয়ার স্বার্থে আনসার মেম্বরকে প্রথমে ২৫ হাজার পরে ৪০ হাজার টাকা দেয় মেয়ের অভিভাবক। মেয়ের অভিভাবকরা গরু বিক্রি করে এই টাকা দেয় বলে তারা জানায়। বাল্য বিবাহ সম্পূর্ণ হওয়ার পর বৈকারী ইউনিয়নের মেম্বর ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বররা ফুঁসে উঠে। তারা আনসার মেম্বরকে অর্থের বিনিময়ে বাল্য বিবাহে সহযোগিতা করায় গালি-গালাজ ও তিরস্কার করে। ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলে বিদেশে থাকায় সকলে অপেক্ষায় ছিলো। আনসার মেম্বর সরকার দলীয় লোক এবং ইউপি মেম্বর হওয়ায় ছেলের অভিভাবক এবং গ্রামবাসী প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এদিকে বাল্য বিবাহের এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর জেলা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটির একটি তদন্ত টিম এলাকায় যায়। তদন্ত টিমে ছিলেন এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি, এ্যাড. সেলিনা পারভীন শেলি, হাসিবুর রহমান ও স ম হাবিবুর হাসান।
তদন্ত টিম এলাকাবাসীর স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এবং ভূয়া এভিড এভিড এর মূল কপি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি এলাকায় এবং জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়লে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। এ সভায় তদন্তটিমের কয়েকজন সদস্য ভিডিও ক্যামেরায় ধারণকৃত ঘটনাগুলো নিয়ে উপস্থিত ছিলো। বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পর বৈকারী ইউপি চেয়ারম্যান সদর থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আসাদুজ্জামান অসলে তার মেম্বরকে নির্দোষ দাবি করেন। তদন্ত টিমসহ উপস্থিত সকলে এতে হতবাক হয়ে যায়।
ঘটনাটি জানতে এড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের তদন্তে এলাকাবাসীর বক্তব্য, ভুয়া এভিডেভিট, মেম্বর আনসারের বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে বাল্য বিবাহের সহযোগীতা করার অভিযোগ প্রমাণ পেয়েছি। এর পরেও চেয়ারম্যান অসলে ভায়ের মিটিংয়ের ভূমিকা রহস্যাবৃত। বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
বৈকারী ইউনিয়নের অধিকাংশ ইউপি মেম্বর ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বররা এই প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোবাইলে জানান, আনসার মেম্বর অর্থের বিনিময়ে ওই বাল্য বিবাহের সহযোগিতা করেছে এটা সঠিক। ওই সময় আমরা এর প্রতিবাদও করেছিলাম এটাও সঠিক। কিন্তু যেকোনো কারণে এখন আমরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছিনা।
বৈকারীতে ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় বাল্য বিয়ে!
পূর্ববর্তী পোস্ট