ম্যাচ শেষে জো রুট কী ভাবছিলেন কে জানে! হয়তো নিজেকেই শাপশাপান্ত করছিলেন, কেন ‘এত তাড়াতাড়ি’ ইনিংস ঘোষণা করলেন!
চতুর্থ দিনের প্রায় শেষ দিকে এসে যখন দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, স্কোরবোর্ডে রান ৮ উইকেটে ৪৯০। তাতে হেডিংলি টেস্টে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২২ রান। কম নয়! কিন্তু কে জানত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই লক্ষ্যটাও প্রায় হেসেখেলে ছুঁয়ে ফেলবে, ৫ উইকেট হাতে রেখে!
যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ক্রিকেটে ইদানীং বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন অনেকে, তারাই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিল রূপকথা লিখে। এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ২০৯ রানে হারের পর কত সমালোচনা। জিওফ বয়কট বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা না পারেন ব্যাট করতে, না পারেন বল করতে। মাইকেল ভনের আশঙ্কা ছিল, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক সিরিজগুলোর একটি হতে পারে এটি। এমনকি প্রিয় দলকে এজবাস্টনে তিন দিনের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হারতে দেখে কিংবদন্তি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার কার্টলি অ্যামব্রোসও উত্তরসূরিদের পারফরম্যান্সকে বলেছিলেন ‘দুঃখজনক’ আর ‘বেদনাদায়ক’। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের টেস্টেই এমন প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়াবে, এটাই বা কে ভেবেছিল? অবিস্মরণীয়! অসাধারণ!!
রুট অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এমন এক চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, যে চ্যালেঞ্জের মুখে তাদের গত পাঁচ বছরেও পড়তে হয়নি। সর্বশেষ পাঁচ বছরে টেস্টে ক্যারিবিয়ানরা সর্বোচ্চ ১৯৪ রান তাড়া করে জিতেছে। সেটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই, ২০১৫ সালে ব্রিজটাউনে। কিন্তু হেডিংলিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নতুন গল্প লিখলেন ক্রেইগ ব্রাফেট ও শাই হোপ। প্রথম ইনিংসে দুজনই সেঞ্চুরি করেছিলেন। ব্রাফেট দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পেতে পেতেও পাননি। বিনা উইকেটে ৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর প্রথম ইনিংসের মতোই জুটি গড়েন ব্রাফেট-হোপ। কিন্তু চা-বিরতির আগের ওভারে মঈন আলীর বলে ক্যাচ দিয়ে ব্রাফেট ফিরে যান ৯৫ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ১৯৭। শাই হোপ কিন্তু হাল ছাড়লেন না। প্রথম রোস্টন চেজকে নিয়ে ৪৯ রানের জুটি, পরে জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে নিয়ে যোগ করেন আরও ৭৪ রান। শেষ পর্যন্ত হোপ শুধু টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরিই পেলেন না, অসাধারণ এক ম্যাচ জিতিয়ে অপরাজিত থাকলেন ১১৮ রানে।
এর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০০০ সালে। এজবাস্টনে ইনিংস ও ৯৩ রানে জেতা ওই টেস্টের নায়ক ছিলেন বাংলাদেশের এখনকার বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। ১৭ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ভুলে যাওয়া সেই জয়ের স্বাদ এনে দিলেন ব্রাফেট-হোপরা। স্টার স্পোর্টস।