গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংর্ঘষে মিয়ানমার সেনাকমান্ডার মিন অং হ্লাইং এর নির্দেশে আরাকান রাজ্যে এক সহিংস অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। বিদ্রোহী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে দাবি করে সাম্প্রতিক এই রোহিঙ্গা নিধনে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এই হামলায় এখন পর্যন্ত পাচঁ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে চার লাখ মানুষ, এক লাখ মানুষ দেশের ভেতর স্থানান্তরিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কে জীবিত পুড়িয়ে তাদের ঘরে হত্যা করা হয়েছে, এমনকি মিয়ানমার সরকারী সেনাবাহিনী, ভিক্ষু, অস্ত্রধারী সরকারী গোষ্ঠি রোহিঙ্গা শিশুদেরকে হত্যা করছে বলে জানিয়েছে হাফপোস্ট। সারাবিশ্ব এই ঘটনায় অং সান সুচিকে দায়ী করে নিন্দা জ্ঞাপন করে আসছে। রোঙ্গিার উপর চালানো আক্রমণকে পাঠ্য বইয়ের জাতিগত নির্মূলের নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা।
এই রোহিঙ্গা নিধনের নেপথ্য রয়েছে সেনাবাহিনীর কমান্ডার মিন অং হ্লাইং। তিনিই প্রথম রোহিঙ্গাদের শুট করার নির্দেশ দেন। মিয়ানমার সরকার পরিচালিত হচ্ছে সেনাসমর্থিত সরকারের মাধ্যমে। এমনকি তাদের সংবিধান সামরিক-খসড়া সংবিধান হওয়ায় সেনাবাহিনীর উপর সুচি ‘র কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সুতরাং বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদেশের পুলিশ, সিকিউরিটি সার্ভিসেস, জেল, সীমান্ত বিষয়, বেসামরিক নিয়োগসহ পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ সদস্য নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে।
সংবিধান সংশোধনী আনার জন্য সংসদের ৭৫% ভোটের প্রয়োজন হয়। তাই মিন অং চাইলেই সংবিধান সংশোধনীতে ভেটো দেয়ার বড় ধরণের ক্ষমতা রাখেন। এজন্য তাকে মিয়ানমারের অস্ত্রধারী দ্বিতীয় সরকার বলা হয়।
মিয়ানমার সেনাকমান্ডার মিন অং হ্লাইং কে যুদ্ধাপরাধের সমান অন্যায় করছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে বিশ্বের মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে খারাপ ভাবে পরিচালনা করছেন। তার বাহিনী সম্প্রতি রোহিঙ্গা হামলার পিছনেই শুধু নয় মিয়ানমারের অন্য জাতী গোষ্ঠির উপর হামলা চালিয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শুধু রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী অত্যাচার চালায়নি এছাড়াও আরো দুটি রাজ্যে এরকম হামলা চালিয়ে গৃহযুদ্ধ বাধিয়েছেন।
তিনি এ বছর এশিয়ায় ভারত, জাপানসহ জামার্নির রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। জাতিগত উৎখাতের ব্যাপারে থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা পৌছান। সবকিছু মিলিয়ে তিনি জাতিগত উৎখাতের যে ক্যাম্পেইন করেছিলেন তাতে সফল হয়েছেন।
তবে এভাবে বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতার হাত যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দিকে চলতে থাকে তাহলে চলমান সমস্যার সমাধান অনিশ্চিত। কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগতভাবে মিন অং হ্লাইং উপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সামরিক মহড়া, সামরিক সহায়তা, এবং সেনাবাহিনীর বদলে পুলিশকে জরুরী অবস্থায় নামাতে হবে। সেনা সমর্থিত সকল কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা করা উচিৎ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।