যৌন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওয়াটগঞ্জ মহিলা থানার কনস্টেবল আজিজা বেগমকে দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল ওই থানারই মহিলা ওসি সুচিস্মিতা মিশ্রের বিরুদ্ধে। এমনকী, রবিবার আজিজাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অত্যাচারে আজিজা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে প্রথমে পুলিশ হাসপাতাল ও পরে ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণামাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন।
এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওয়াটগঞ্জ মহিলা থানার ওসি সুচিস্মিতা মিশ্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং ডিসি (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রাজার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অত্যাচারিতা কনস্টেবলের বাবা মহম্মদ বরকতুল্লা। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মহিলা ওসি সুচিস্মিতা মিশ্র। ডিসি (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রাজা জানান, ‘বিষয়টি এখনও পর্যন্ত আমার জানা নেই। এই বিষয়ে কোনও অভিযোগপত্রও এখনও পর্যন্ত আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ হাতে পেলে কে প্রকৃত দোষী তা নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হবে।’
কোলাঘাটের ছাতিন্দা গ্রামের তরুণী আজিজা। কয়েক বছর আগে তিনি কলকাতা পুলিশে চাকরি পান। প্রথমে তিনি ওয়াটগঞ্জ সাধারণ থানাতেই পোস্টিং ছিলেন। কয়েক বছর আগে ওয়াটগঞ্জ মহিলা থানা তৈরি হলে তিনি ওই থানাতেই বদলি হয়ে আসেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আজিজা। তাঁর বাবা মহম্মদ বরকতুল্লা অভিযোগে জানিয়েছেন, “মহিলা থানাতে বদলি হয়ে আসার পরেই সেই থানার ওসি সুচিস্মিতা মিশ্র আজিজাকে প্রথমে যৌন প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি হয়নি আজিজা। এরপরই শুরু হয় তার উপর ওসির নানা ধরনের নির্যাতন। মাঝরাতে ডিউটি চলাকালীন মদ কিনে আজিজাকে ওসির খালি কোয়ার্টারে আসতেও বলা হয়। সেই সময় বলা হয়, পুলিশের উর্দি ছেড়ে টাইট জিনস ও টি শার্ট পরে যেন আজিজা ওসির কোয়ার্টারে আসে। কিন্তু আজিজা ওসির সেই কথা শোনেনি।”
কথা না শোনার জেরেই আজিজার উপর ওসির অত্যাচার আরও বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ। মহম্মদ বরকতুল্লার অভিযোগ, ‘ওসির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করতে থাকে আজিজা। এই অবস্থায় আমরা আজিজাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলি। এমনকী, বলি তাকে অন্য থানায় বদলি নিয়ে নিতে। নিজের বদলির জন্য চেষ্টাও করে আজিজা। কিন্তু সেই কথা কোনওভাবে ওসি জানতে পেরে আমার মেয়ের উপর অত্যাচার আরও বাড়িয়ে দেন। তা সহ্য করতে না পেরে আজিজা এমএ পড়ে অন্য কোনও ভাল চাকরি নেওয়ার জন্য ওসির কাছে ছুটির দরখাস্ত নিয়ে যায়। কিন্তু সেই দরখাস্ত ওসি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে চরম গালিগালাজ করেন। এই অত্যাচারে আজিজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য ছুটি চাইতে গেলেও তা দেওয়া হয় না। এই অবস্থায় অসুস্থ আজিজাকে আচমকা বিহারে তল্লাশিতে পাঠাবার উদ্যোগ নেন ওসি। এমনকী, পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও ওসি জানিয়ে দেন, আজিজার কোনও রোগ নেই। সবটাই ওর অভিনয়। সেইভাবেই ওকে দেখুন।’
মহম্মদ বরকতুল্লা জানান, ‘এই অবস্থায় রবিবার আজিজাকে থানায় আটকে রেখে মারধর করেন ওসি। আমার মেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাধ্য হয়ে প্রথমে পুলিশ হাসপাতাল ও পরে ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ওসির অত্যাচারে আমার মেয়ে এখন মানসিক ও শারীরিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’