এবার মিয়ানমারের শিন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিদ্রোহী ও দেশটির সেনাবাহিনীর সদ্স্যদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে বলছে, শিন রাজ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া এই সংঘর্ষে সেখানকার বাসিন্দারা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার। এর মাঝেই শিন রাজ্যে আরাকান আর্মির সদস্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে মিয়ানমার থেকে শত শত মানুষ ভারতে ঢুকছে।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে সেনাবাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।
দ্য হিন্দু বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৩০০ মানুষ মিয়ানমারের শিন রাজ্য থেকে ভারতে ঢুকে পড়েছে। ভারতের দক্ষিণের প্রদেশ মিজোরামের পর্বত অঞ্চলের চারটি প্রত্যন্ত গ্রামে পালিয়ে আসা নারী, শিশু ও পুরুষরা আশ্রয় নিয়েছে। মিজোরামের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ত্রাণ সরবরাহ করেছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিধ্বস্ত রাখাইন প্রদেশ লাগোয়া শিন প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পালেতওয়া এলাকায় আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে কয়েকশ’ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
দ্য হিন্দু বলছে, ভারতে ঢুকে পড়া মিয়ানমারের এই নাগরিকরা বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী; যারা দক্ষিণ মিজোরামের বাসিন্দাদের মতোই আদিবাসি ভাষায় কথা বলেন।
মিজোরামের লংলাই জেলার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় এই দৈনিক বলছে, শিন রাজ্যের অস্থিতিশীলতায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ার ঘটনা গত কিছুদিনের মধ্যে চারবার ঘটলো।
চলতি মাসের শুরুর দিকে শিন রাজ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পালেতওয়া এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্যদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্তত ১১ সদস্য নিহত ও আরো ১৪ জন আহত হয়।
গত ৯ নভেম্বর মিয়ানমারের দৈনিক দ্য ইরাবতি দেশটির সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, হতাহতের ওই ঘটনা ঘটেছে কালাদান নদীতে একটি নৌকা লক্ষ্য করে আরাকান আর্মির গোলা নিক্ষেপের পর।
দ্য হিন্দু বলছে, রাখাইনের পার্শ্ববর্তী এই রাজ্যে গত ৮ নভেম্বর থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। পালেতওয়ার পাশের দুটি গ্রামে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। শিনের এই সংঘর্ষের ঘটনার পর রাখাইনের উত্তরাঞ্চলেও দুই পক্ষের লড়াই বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইন ও শিন প্রদেশে আরাকান আর্মির সদস্যরা ক্রমান্বয়ে সক্রিয় হয়ে উঠছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে তারা।
২০১৬ সালে দেশটির বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরকারের শান্তি-প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়। সেই সময় শান্তির প্রক্রিয়ার একটি রেফারেন্স গাইডে বলা হয়, আরাকান আর্মি গঠিত হয়েছে ২০০৮ সালে। জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল গঠনই এই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য।
অপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) মিত্র গোষ্ঠী হচ্ছে আরাকান আর্মি (এএ)। তাদের অর্ধেকের বেশি সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয় কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি। আরাকান আর্মির অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ও কেআইএ নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। রাখাইনের কিয়াকত্য, ম্রক-ইউ ও মিনবিয়াসহ শিনের পালেতওয়া এলাকায় সক্রিয় রয়েছে আরাকান আর্মি।
কেআইএ, এএ ও তা’আঙ ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও কোকাংভিত্তিক মিয়ানমার ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি মিলে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট গঠন করেছে। ২০১৫ সালে দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সরকারের স্বাক্ষরিত দেশব্যাপি জাতীয় শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।
গত বছর সীমান্ত বাণিজ্য অঞ্চলে একাধিকবার হামলা ও মান্দালয়-ল্যাসিও-মিউস মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তা সাময়িক বন্ধ করে রাখে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। এ ঘটনার পর শান রাজ্য কর্তৃপক্ষ নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে।