ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) হলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা। সাধারণত সময় বা কারণ-নিরপেক্ষ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ বলতে মূলত ইদানীংকার উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করা হয় এবং এটি মানুষের কার্যক্রমের প্রভাবে ঘটেছে। UNFCCC বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে পরিবর্তনসমূহকে মনুষ্যসৃষ্ট (anthropogenic) জলবায়ুর পরিবর্তন বলে।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শিগগিরই বিপদসীমা অতিক্রম করতে চলেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে তাপমাত্রা। এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির অর্থ হিমবাহ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, যা মহা প্লাবন ডেকে আনতে পারে। ফাঁস হওয়া এই তথ্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যপূরণ নিয়েও সংশয় তৈরি করেছে।
শিল্পায়নের আগের পর্যায়ে পৃথিবীর যে গড় তাপমাত্রা ছিল, তার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এ জন্য উদ্যোগী হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি। প্যারিস চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য ছিল এটি। কিন্তু, সেই লক্ষ্যপূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে জাতিসংঘের এই রিপোর্ট। ফাঁস হওয়া খসড়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, দুই দশকের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই এই তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমানো গেলে, এই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তাপমাত্রা কমানো যেতে পারে।
৩১ পাতার খসড়া নথি চূড়ান্ত হবে আগামী অক্টোবরে। এই নথির বিভিন্ন অংশ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক সংবাদপত্রে। যদিও পুরো নথি প্রকাশিত হয়নি। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাবে। এই জলস্ফীতির জেরে সমুদ্রের লাগোয়া বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভেসে যেতে পারে জনপদও। তাই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে খুব বিপজ্জনক বলে জাতিসংঘের খসড়া নথিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে ইতোমধ্যেই তুমুল আলোচনা শুরু হলেও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের মুখপাত্র জোনাথন লিন এ নিয়ে সাবধানী মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষায়, খসড়ার ভাষ্য অনেক পরিবর্তিত হবে। চূড়ান্ত নথির সঙ্গে এর অনেকাংশেই অমিল থাকবে। এই খসড়া তৈরিতে যুক্ত ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড্রিউ শিনডেলও একই সুরে বলেন, খসড়া ও চূড়ান্ত নথির মধ্যে অনেকটাই ফারাক থাকার সম্ভাবনা।
দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা এই প্রথম সামনে এল, এমনটা নয়। গত বছর ‘জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই আশঙ্কার কথা বলেছিল। তাতে লেখা হয়, উনিশ শতকের তুলনায় গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি বাড়তে চলেছে চলতি শতকে। ১৮৫০-১৯০০ সালে যে গড় তাপমাত্রা ছিল, তার থেকে ১.১ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা ছিল গত বছর, ২০১৭ সালে। এই বৃদ্ধিই ইঙ্গিত দিয়েছে, আগামী এক দশকে তাপমাত্রা কোথায় যেতে পারে।