মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জনসম্মুখে ঘটেছে এ ঘটনা। হামলার ধরণ পত্রিকায় এসেছে। তাঁর মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। হামলাকারী মোক্ষম জায়গা বেছে নিয়েছে। জাফর ইকবালের মাথা। তাঁর কন্ঠ একেবারে রোধকরাই যে এ হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গণিত অলিম্পিয়াডে এ দেশের ক্ষুদে কেউ নাম করলে যাঁর বুক গর্বে ভরে ওঠে, তাদের নামেই যিনি গ্রন্থ উৎসর্গ করেন, যিনি বাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস শেখাচ্ছেন, বিজ্ঞান ও গণিতের জটিলকে সহজ করে এদেশের বাচ্চাদের বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন, বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠনে যিনি স্বেচ্ছায় নিয়োজিত, একজন শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, শিশুকিশোর প্রিয় একজন নিবেদিতপ্রাণ আত্মজন এর কন্ঠ কেন চিরতরে বন্ধের প্রয়োজন ? তিনি তো রাজনীতি করেন না। তিনি একজন শিক্ষক। একজন শুদ্ধ জ্ঞানের পরিব্রাজক। তিনি কারো শত্রু হতে পারেন না। সেই তাঁর মতো মানুষের ওপরে হামলা ― সত্যিই দম আটকানো পরিবেশে আছি আমরা।
ক্র্যাব নেবুলার কল্পলোকে বিচরণশীল এই মানুষ যেন ‘ আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’। তিনি একাই একটা বাংলাদেশ। আলোর বাংলাদেশ, জ্ঞানের বাংলাদেশ, আগামী নির্মাণের বাংলাদেশ। তাঁকে থামালেই বাংলাদেশ থেমে যেতে পারে। তাই কি তিনি লক্ষ্য হয়েছেন? এ প্রশ্ন জাগছে মনে।
পত্রে-শাখার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে বসে আছে যে সব স্বর্ণলতিকা, অনেক রক্ত শুষে খেয়েছে। উঠতি দেশ-বৃক্ষের রক্ত খেয়ে খেয়ে তারা মোটাতাজা হয়েছে। হুমায়ুন আযাদ থেকে অভিজিৎ , শামসুর রাহমান কেউ বাদ যায়নি। ১৪ ডিসেম্বর আর আজ ৩ মার্চ তাই একসূত্রে গাঁথা বলে মনে করি।
যে ছেলেটিকে ধরা হয়েছে―তার ছবি পত্রিকায় এসেছে। দেখে মনে হয়নি যে , সে একাই এ কাজ করেছে। এর পেছনে অনেক বড় শক্তি আছে। খোঁজ করলে বোঝা যাবে।
আশার কথা যে, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আশংকামুক্ত। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিলেট থেকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। সাথে সাথে এই ঘটনায় জড়িতদের মূলোৎপাটনের দাবি জানাই। এই ঘটনার নিন্দা জানাই। তাঁর রক্তাক্ত মস্তিষ্ক যত দ্রুতই সেরে উঠবে―ততই এদেশের মঙ্গল।