চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ। মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপুরের পর রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। তাদের অবরোধের মুখে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এই অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আল ফজলে রাব্বী। দুপুর একটার দিকে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে প্রত্যেক দিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে শিক্ষার্থীরা।
‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন’ করে এই কর্মসূচি পালন করা হবে জানিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক আল ফজলে রাব্বী বলেন, ‘সরকারের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা আমরা মানি না। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা সংগঠন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলনে বিভক্তির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল।সংগঠনটির নেতারা শিক্ষার্থীদের কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে আগামী ৭ মে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলেছেন। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তবে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাংশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের দাবি না মেনেই রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।
এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রোববার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।
এরপর গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খাঁন কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠক করেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে তারা সরকারের আশ্বাসে আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তবে তাদের এ ঘোষণা একাংশ মেনে নেননি। তারা ক্যাম্পাসে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করছেন।