আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লজ্জা! আর কী বা বলা যায়। একবছর আগে কাশ্মীরে ভোটের সময় স্থানীয়দের ছোড়া পাথরের হাত থেকে ভোটকর্মীদের বাঁচাতে এক স্থানীয় কাশ্মীরি যুবককে মানব ঢাল বানিয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁকে এর জন্য পুরস্কারও দিয়েছিল। সেই মেজরই শ্রীনগরের এক হোটেলে ১৬ বছরের এক কাশ্মীরি কিশোরীর সঙ্গে রাত কাটাতে গিয়ে ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে।
কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, মেজর লীতুল গগৈ, অনলাইনে, শ্রীনগরের ডালগেট এলাকার গ্র্যান্ড মমতা হোটেলের একটি ঘর বুক করেছিলেন। গত ২৩ মে তারিখে সকালে তিনি শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হোটেলে এসে পৌঁছান। অবশ্য তিনি তাঁর ‘মেজর’ পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান তিনি ব্যবসার কাজে কাশ্মীর এসেছেন। তিনি অবশ্য একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে আসেন স্থানীয় এক ব্যক্তি ও ওই কিশোরী।
হোটেলের মালিক জানিয়েছেন, গগৈ হোটেলের রেজিস্টার ফর্মে দুজনের নাম নথিভুক্ত করতে যেতে হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক ওই দুজনের আধার কার্ড চায়। আধার কার্ড দুটি দিতেই দেখা যায়, তাদের একজন স্থানীয় কিশোরী। এতে ফ্রন্ট ডেস্ক তাঁকে জানায় স্থানীয়দের তারা ঘর ভাড়া দিতে পারবে না। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি সেসময় স্থানীয় ওই ব্যক্তি ও কিশোরী বাইরে একটি গাড়িতে বসেছিলেন। এরপরই গাড়িতে থাকা ওই ব্যক্তিকে ফ্রন্ট ডেস্কের কর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দেন। উত্য়প্ত বাদানুবাদ চলার মধ্যেই হোটেল থেকে খবর দেওয়া হয় খানিয়ার থানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মমতা হোটেলের ফোন পেয়ে তারা এই হোটেলে যায়। এরপরই বেরোয় মেজরের আসল পরিচয়। জানা যায় স্থানীয় ওই ব্যক্তির নাম সমীর আহমেদ। তিনি বুড়গামের বাসিন্দা। জানা যায় কিশোরীর পরিচয়ও। তাঁর বয়স ১৬। তিনজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেসময় মেজর বাধা দেন। তাঁকে একরকম টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনা অফিসারটির পরিচয় ও তাঁর বিবৃতি গ্রহন করে তাঁকে তাঁর ইউনিটের হাতে তুলে দিয়েছে। বিবৃতি গ্রহন করা হয়েছে কিশোরীটিরও। তবে এবিষয়ে আরো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কাশ্মীর পুলিশের আইজি এসপি পানি। এ ব্যাপারে শ্রীনগরের এসপি (উত্তর)-র নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আসলে মেজর লীতুল গগৈ, কোনও অপরিচিত নাম নয়। গত বছর কাশ্মীরে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন একাংশের কাশ্মীরিরা। ভোটকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে তারা ভোটকর্মীদের গাড়ি লক্ষ্য করে সমানে পাথর বৃষ্টি করেছিল। সেসময় গগৈ এক কেন্দ্রে ভোটকর্মীদের পৌঁছতে এক অন্য উপায় নিয়েছিলেন। ফারুক দার নামে এক কাশ্মীরি যুবককে তিনি জিপের সামনে ঢাল হিসেবে বেঁধে নেন। এতে স্থানীয়রা আর গাড়িটি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে পারেনি।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক উঠলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী মেজর গগৈ-এর ওই কাজকে পুরস্কৃত করেছিল। তাঁকে নিজে হাতে কমেন্ডেশন কারড তুলে দিয়েছিলেন ভারতের সেনা প্রধান বিপিন রাউত।
এদিনের ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় কাশ্মীরিরা একহাত নিয়েছেন মেজরকে। ফারুক দারের আইনজীবি আহসান আনটু বলেন, ‘এবারে মেজরের আসল রূপ সামনে এল।’
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি, মেজরের সঙ্গে হোটেলের ঘরে রাত কাটাতে কিশোরীটিরও সম্মতি ছিল। তাকে জোর করা হয়নি। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তার বয়সের কথা চিন্তা করলে এটা একটা গুরুতর অপরাধ বটেই। সবচেয়ে বড় কথা এই ঘটনায় মুখ পুড়ল ভারতীয় সেনাবাহিনীর।