খেলার খবর: দুই দলের আগের লড়াইয়ে নায়ক ছিলেন ফখর জামান। সেটি ছিল আগে ব্যাট করে। ফাইনালে চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বেশি। বড় ম্যাচের চাপ শুধু নয়, জিততে হল গড়তে হতো রান তাড়ার রেকর্ড। কিন্তু কঠিন চ্যালেঞ্জে আরও উত্তাল ফখরের ব্যাট। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বাঁহাতি ওপেনার পাকিস্তানকে এনে দিলেন শিরোপা।
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তান। সিরিজ-টুর্নামেন্ট মিলিয়ে টি-টোয়েন্টির শীর্ষ দলটি জিতল টানা ৯ সিরিজ!
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে রোববার অস্ট্রেলিয়ার ১৮৩ রান তাড়ায় পাকিস্তান জিতেছে ৪ বল বাকি রেখে।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের এটিই সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ড ছিল ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৭৫ রান তাড়ায় জয়।
এক বছর আগে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ফখরের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতকে চমকে দিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এবার সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। তবে তার ৪৬ বলে ৯১ রানের ঝড়ো ইনিংসই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য।
অথচ পাকিস্তানি ওপেনারদের আগে ঝড় তুলেছিলন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনাররা। অ্যারন ফিঞ্চ ও ডার্সি শর্ট গড়েন দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি। ৯.৫ ওভারেই জুটিতে আসে ৯৫ রান।
ফর্মে থাকা ফিঞ্চ করেছেন ২৭ বলে ৪৭। টুর্নামেন্টের আগের ম্যাচগুলোয় কিছু রান পেলেও পুরো ছন্দে না থাকা শর্ট ফাইনালে খেলেছেন ৫৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।
এই জুটি ভাঙার পর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার পরের ব্যাটসম্যানদের কেউ কাজে লাগাতে পারেননি দারুণ ভিতটাকে।
রান বাড়াতে তিনে নামা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যর্থ। ওপেনারদের পর সর্বোচ্চ ছিল পাঁচে নামা ট্রাভিস হেডের ১১ বলে ১৯ রান। মার্কাস স্টয়নিস করেছেন ১২। আর কেউ পারেননি দু অঙ্ক ছুঁতে। দুইশ ছাড়ানোর পথে থাকলেও শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া থমকে যায় ১৮৩ রানে।পাকিস্তানের শুরুটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার উল্টো। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফ স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে মেলে অভাবনীয় সাফল্য। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট!
প্রাথমিক পর্বের চার ম্যাচে মোহাম্মদ হাফিজ ও হারিস সোহেলকে দুটি করে ম্যাচে ওপেন করিয়ে ফল পায়নি পাকিস্তান। ফাইনালে ফখরের সঙ্গে জুটিতে পাঠানো হয় সাহিবজাদা ফারহানকে। কিন্তু অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান আউট শূন্য বলে শূন্য রানে। ওয়াইড বলে স্টাম্পড!
তিন বল পর ফেরেন তিনে নামা হুসাইন তালাত। ২ উইকেটে পাকিস্তানের রান ২।
ম্যাক্সওয়েলকে তুলোধুনো করেই পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণের শুরু। তৃতীয় ওভারে তাকে টানা দুটি চার মারেন ফখর। ওভারের শেষ দুই বলে সরফরাজ আহমেদ মারেন চার ও ছক্কা।
সেখান থেকে পাকিস্তানের ইনিংস যে গতি পেয়ে যায়, তা আর থামেনি। সরফরাজ আউট হয়েছেন ১৯ বলে ২৮ রানে। তবে ফখরের ব্যাটে উড়েছে পাকিস্তান।
শোয়েব মালিকের অভিজ্ঞ ব্যাট স্ট্রাইক দিয়ে গেছে ফখরকে। এই ওপেনার একরকম ছেলেখেলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের নিয়ে। তৃতীয় উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েন দুজন। তাতে ফখরের অবদান ছিল ৩৬ বলে ৭৩, মালিকের ২৮ বলে ২৭।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচটিতেই করা ৭৩ ছিল ফখরের সর্বোচ্চ রান। এদিন সেটি ছাড়িয়ে করলেন ৯১। ১২ চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা তিনটি।ফখর আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৪ ওভারে ৩০ রান। পরের ওভারে অ্যান্ড্রু টাই দেন মাত্র ২ রান। একটু উত্তেজনা ফেরে ম্যাচে। কিন্তু জাই রিচার্ডসনের এক ওভারে মালিক ও আসিফ আলির দুটি ছক্কায় সহজ হয়ে যায় সমীকরণ।
৩৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় সঙ্গে নিয়েই ফেরেন মালিক। ১১ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন পাকিস্তানের এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা পারফর্মার আসিফ আলি।
ফাইনালের সেরা তো বটেই, ৫৫.৬০ গড় ও ১৫৭.০৬ স্ট্রাইক রেটে ২৭৮ রান করে টুর্নামেন্টেরও সেরা ফখর। সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৮৩/৮ (শর্ট ৭৬, ফিঞ্চ ৪৭, ম্যাক্সওয়েল ৫, স্টয়নিস ১২, হেড ১৯, কেয়ারি ২, অ্যাগার ৭, উইল্ডারমুথ ১*, টাই ০, রিচার্ডসন ৬*; আমির ৩/৩৩, ফাহিম ১/৩৮, হাসান ১/৩৮, শাহিন শাহ ১/৩২, শাদাব ২/৩৮)।
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১৮৭/৪ (ফখর ৯১, সাহিবজাদা ০, তালাত ০, সরফরাজ ২৮, মালিক ৪৩*, আসিফ ১৭*; ম্যাক্সওয়েল ২/৩৫, স্ট্যানলেক ০/২৫, রিচার্ডসন ১/২৯, টাই ০/৩৩, স্টয়নিস ০/৩১, উইল্ডারমুথ ০/১৬, অ্যাগার ০/১৬)।
ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান
ম্যান অব দা সিরিজ: ফখর জামান