বিনোদন সংবাদ: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন তারকা শিল্পীরাও। সাংগঠনিক কোনও জোটবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও দেশের নাটক, চলচ্চিত্র এবং সংগীতাঙ্গনের মানুষরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন প্রতিনিয়ত। যেমন প্রতিবাদ এর আগে এতটা কোনও ইস্যুতে লক্ষ করা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পাশাপাশি কেউ কেউ সরাসরি রাজপথে নামারও আহ্বান জানাচ্ছেন।
তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো-
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম ১ আগস্ট নিজের ফেসবুকে লিখেছেন এভাবে, ‘‘সাধারণ মানুষের ভোগান্তি’’- এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথাটি খুবই অবান্তর। কারণ, সাধারণ মানুষ সারা বছরই নানা ভোগান্তিতে ভোগেন। আমিও সাধারণ মানুষ, আপনিও। পায়ে হেঁটে কাজে এসেছি আজ। আরও আসবো, কষ্ট করতে রাজি আছি। কিন্তু এই স্বেচ্ছাচারিতায় বাঁচতে রাজি না। হোক আন্দোলন, হোক স্বনির্ভর অভিযান।
কোণঠাসা হয়ে ঝিমিয়ে, নুইয়ে, মেনে নিয়ে, সহ্য করে, আপস করে, ঠকে বাঁচার চেয়ে প্রতিবাদ করে নিজের বাঁচার পথ সুগম করা অনেক ভালো।
অন্যদিকে নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ ১ আগস্ট শনির আখড়ায় ট্রাকচাপার ঘটনা প্রসঙ্গে তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘শনির আখড়ায় আজ যা হলো সেটার পর বলতেই হচ্ছে- এদেশে আল্লাহর গজব নামতে বেশি দেরি নাই…।’
অন্যদিকে একই দিনে দেশের নন্দিত চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা সরকারের উদ্দেশে তার পোস্টে লেখেন, ‘সরকারের দায়িত্বশীল কেউ একজন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিন। এ পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা ওদেরকে জানান। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট হলফনামা দেওয়া হোক। নৌমন্ত্রীর নিষ্ঠুর আচরণের তুলনায় তার সামান্য দুঃখপ্রকাশ যথেষ্ট নয়। পরিবহন নীতিমালায় কী কী থাকছে মন্ত্রিসভায় ওঠার আগেই তার সারাংশ জানানো হোক। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে আছি।’
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা লেখেন, ‘ধানমন্ডি থেকে উত্তরা যাচ্ছিলাম শুটিংয়ের উদ্দেশে। এয়ারপোর্ট ক্রস করার পর পরই দেখলাম জটলা, সব গাড়ি যে যার মতো তাড়াতাড়ি ঘোরাচ্ছে। সব গাড়ির সাথে পুলিশের গাড়িও ঘোরাচ্ছিল। ঠিক বুঝলাম না, পরে জানতে পারলাম বাস পোড়াচ্ছে সামনে। একটু পরই আমার পাশের বাসেই মারপিট শুরু, ভাঙচুর শুরু, কিন্তু আমার একটুও ভয় লাগলো না। বাসের ড্রাইভারের লাইসেন্স চাওয়াতে সে ক্ষেপে গেলেন- তাই শুরু হলো মারামারি। আমি দেখলাম স্টুডেন্টদের আবেগ, তারা তাদের সোনার দেশ তো সোনার মতোই খাঁটি রাখতে চায়। সমর্থন রেখে গেলাম।’
এদিকে নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন জাবালে নূর পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল প্রসঙ্গে লেখেন, ‘শুধু জাবালে নূর এর ফিটনেস আর লাইসেন্স বাতিল করেই দায়িত্ব শেষ! দেশটা তো আবালে নূর দিয়ে ভরে গেছে! আগে ‘মানুষ মারার লাইসেন্স’ ফেরত দেন।’
অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রথম থেকেই বেশ অ্যাকটিভ সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২৯ জুলাইয়ের একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হবে না কিচ্ছু…। রাজীবরা হাত পা খোয়ানোর কষ্টে অভিমানে মরবে। কার কী হবে! ওদের (চালকদের) বিচার কেউ করবে না। এত সময় কার আছে? সময় নেই বলেই পায়েলকে (এনএসইউর ছাত্র) ফেলে দিয়েছে ব্রিজ থেকে। তো কী হবে বিচার?
যে তিনটা বাচ্চাকে আজ (২৯ জুলাই) শরীর থেঁতলে দিয়ে খুন করা হয়েছে ওরা কি আবার কলেজে যাবার জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে?
কী হবে আন্দোলন করে? অ্যাকসিডেন্টের কোনও বিচার নেই এটা ওরা জানে। তাই রাস্তার দাঁড়ানো মানুষকে পোকামাকড় মনে করে পিসে দেয় ওরা।
আচ্ছা কবে দেখছেন গণধোলাইয়ে যদি কোনও চোর মরে- তাহলে কি বিচার হয়? রাস্তায় একটা ছিঁচকে চোর পাইলে তো পেটাতে হেব্বি মজা লাগে। তাহলে এইসব মানুষখেকো শয়তান পিটায় মারতে কী মজা লাগবে বলেন!! এত আন্দোলন এর সময় কই। ইনস্ট্যান্ট পিটিয়ে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখলেই হয়। ও মানুষ মারছে, তাই সে গণধোলাইয়ে মরছে। এইসব বিচার চাওয়ার সময় কই…। আর কবে দেখছেন বিচার পেতে? তাই যেখানে ওরা মারবে, ঠিক সেখানে ওরাও মরবে…। কি দরকার বিচার চেয়ে সময় নষ্ট করার।’
৩১ জুলাই যুক্তরাজ্যে বসে সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদ লেখেন, ‘হে বাংলাদেশ- ১৮ বছর বয়সের বুকে এতো ঘৃণা ও ক্রোধ জমিয়ে তুমি কাকে দেশপ্রেমিক বানাতে চাও?’
একই দিন তরুণ কণ্ঠশিল্পী পুলক অধিকারী রাজপথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে লেখেন, ‘এতোদিন ছিলাম ডিজিটাল, আজ থেকে ফিজিক্যালি থাকবো রাস্তায় প্রিয় ছাত্রদের সাথে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’
একটি ভিডিও শেয়ার দিয়ে কণ্ঠশিল্পী কোনাল লেখেন, ‘এক মায়ের আর্তনাদ, এক বোনের হাহাকার, এক বন্ধুর কান্না, আর কত? আর কতবার বললে, আর কত অপরাধ করলে, আর কত জীবন পিষ্ট হলে দেশমাতা শুনবেন? আর কত মায়ের বুক খালি হলে, বেঠিক হবে সঠিক?’
এদিকে টেলিভিশন অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতা ও অভিনেতা রওনক হাসান ৩১ আগস্ট তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে, পুলিশের মার খাবে আর তাদের বাবা মা বাসায় বসে ইয়া নফসি করবে, আমরা ফেসবুকে সহমত, মানি না, মানা যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি বলে প্রতিবাদে ফেসবুক ফাটিয়ে ফেলবো তাতেই সমাধান ভাবছেন?
রাস্তায় নামলে কালার হবেন, সরকারবিরোধী বলে বিবেচিত হবেন, সরকারি যেসব সুবিধা ভোগ করছেন বা ভোগ করবেন বলে ভাবছিলেন সেগুলো ব্যাহত হবে বলে ঘরে বসে আছেন? অথবা আমি ছাপোষা মানুষ আমার কীইবা করার আছে- এসব ভাবছেন!
তাহলে শুনুন, রাস্তার নিরাপত্তার দাবি সরকারবিরোধী কোনও আন্দোলন নয়। এটি মানুষের মৌলিক দাবি। আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ, দশ, বিশ বছর সরকারে থাক। কিন্তু অবশ্যই মানুষকে সাথে নিয়ে। এই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাদের অগ্রাহ্য করে কখনও কেউ সফল হয়নি। আর সরকারবিরোধী দল যারা আছেন, সকল আন্দোলনে পলিটিক্স না খুঁজে জনগণের দাবির সাথে মিলিত হন। সবকিছুতেই সরকারের পতন চাই বলে তোতা পাখি না হয়ে মানুষের বন্ধু হন। আর সাধারণ আমরা যারা আম জনতা, আমরা কি ভাবছি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কাঁধে বন্দুক রেখে দাবি আদায় হয়ে যাবে! মা-বাবারা ঘরে বসে ইয়ানাফসি না করে রাস্তায় সন্তানের পাশে দাঁড়ান। যে পুলিশ বাচ্চাদের রক্তাক্ত করছেন কাল দেখুন আপনারই সন্তান অন্য পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হবে। আর প্রতিবাদী বিপ্লবীরা ফেসবুকে আর ঘরে বসে না থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসুন হে!’
৩০ জুলাই অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া লেখেন, ‘এইসব ১২/১৫ বছরের বাচ্চারা তো শখ করে রাস্তায় নামেনি! তাদের বাধ্য করা হইছে! হ্যাঁ কষ্ট হচ্ছে। শান্তিনগর থেকে গুলশান হয়ে, ৩০০ ফিট ঘুরে, উলুখোলা হয়ে উত্তরা যেতে হচ্ছে আমাকে! কিন্তু আমাদের এই সাময়িক কষ্ট থেকে এইসব সমস্যার একটা শক্ত সমাধান জরুরি।
আজকে ওদের বন্ধুদের মৃত্যুর জন্য ওরা রাস্তা অবরোধ করেছে! কালকে আমি আমার কোনও বন্ধুর মৃত্যুর বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে চাই না!’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আগে থেকে একটু জানালে কিছু মানুষ যারা বিদেশ যাচ্ছে কিংবা কারও পরীক্ষা আছে- তাদের দুর্ভোগটা কম হতো!’
১ আগস্ট নিজের ফেসবুক দেয়ালে আন্দোলনরত ছাত্রদের একটি ব্যানারের ছবি পোস্ট করে অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল লেখেন, ‘বুকে গুলি করিস না, এখানে বঙ্গবন্ধু ঘুমায়। বন্ধু জেগে উঠলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এদিকে চলচ্চিত্রের মানুষদের চলমান আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ফেসুবক-টুইটারে। এরমধ্যে চিত্রনায়ক নিরব হোসেন ছোট্ট করে লেখেন, ‘সাথে আছি ভাই তোদের…।’
অভিনেত্রী-নির্মাতা-কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ অ্যাকটিভ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পোস্ট হলো এমন-
ওরা কিন্তু রাজনীতি বোঝে না- রাজনীতি করতে পথে নামেও নি.., কিন্তু রাজনীতির প্রতি, রাজনীতিবিদদের প্রতি কি পরিমাণ ঘৃণা জন্মে যাবে তাদের মনে ভেবে দেখছেন?
এই ছেলেপুলে গুলোই আগামী ২/১ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে- হয়তো ছাত্র রাজনীতিও করবে। আজকের এই ঘৃণা কি ওদের ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দেবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- তিনি তো কোমল হৃদয়ের মানুষ… সারা জীবন সেভাবেই দেখে এসেছি তাঁকে। আজ কেন তাঁর কোমলতা দেখাতে দেরি করছেন? তাঁর সম্বন্ধে এই বাচ্চাগুলোর ধারণা কোনদিকে যাচ্ছে!
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- আপনি ছাড়া আর কে আছে আমাদের? কার কাছে যাব? আপনাকে এই কিশোর কিশোরীরা ভুলভাবে জানুক তা তো চাই না। এদের ঘরে ফেরাতে আপনার একটি আশ্বাসের বাক্যই তো যথেষ্ট। আপনি কি তাদের মাথায় আপনার হাতটা একটু রাখবেন না?
এদিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক তার সহকর্মীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে ১ আগস্ট লেখেন, ‘আমি রাজপথে নামছি। আপনি? চলুন সবাই মিলে সোচ্চার হই। আর কোনও মৃত্যু নয়।’
গীতিকার দেলোয়ার আরজুদা শরাফ পুলিশের প্রতি প্রশ্ন তোলেন গানের তালে, ‘কাকে পেটাও/ কার রক্ত ছিটাও/ কাকে করছো শেষ/ মনে রেখো- ওরাই বাংলাদেশ।’
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কড়া বক্তব্য নৌপরিবহন মন্ত্রীকে ঘিরে। তার ভাষ্য এমন, ‘ইনবক্সে কেউ কেউ লিখছেন, ভাই, শাজাহান খান তো নৌপরিবহন মন্ত্রী। সড়ক পরিবহনের সমস্যায় উনি পদত্যাগ করবেন কেন? উনি নৌপরিবহনমন্ত্রী সবাই জানে। কিন্তু উনি যেহেতু উভয়চর প্রাণী সেহেতু উনার রাজত্ব ডাঙ্গায়ও বিদ্যমান। সড়ক পরিবহন খাতের নাটের গুরু এই লোক, এটা সবাই জানেন। তবে উনাকে বরখাস্তের কথা আসছে, উনার নিষ্ঠুরতা এবং মন্ত্রীর পদমর্যাদা খাটাইয়া ষণ্ডামি করার কারণে। নৈতিকভাবে তো উনার মন্ত্রিত্ব হারানোর কথা ছিল তারেক মাসুদের ঘটনার পর উনার ভূমিকার কারণেই। এইবার সেটা ষোলকলা পূর্ণ হইছে। এখানে মনে রাখা দরকার, কেউ উনার পদত্যাগ চাচ্ছে না, চাচ্ছে বরখাস্ত। পদত্যাগ করার মতো লজ্জা শরমবোধ উনার নাই। সবশেষে, সড়ক পরিবহন নীতিমালা বা আইন কানুন সংস্কার সেটা অন্য বিষয়। সেটার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহলকে চাপ দিতে থাকেন।’
এক জীবনে অনেক প্রতিবাদী গান নিজে লিখে কণ্ঠে তুলেছেন মাকসুদুল হক। হয়েছে প্রচুর জনপ্রিয়। এবার তিনি নতুন গান না বাঁধলেও জানিয়েছেন কড়া প্রতিক্রিয়া। তার পোস্ট এমন, ‘মিরপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে বাস ও যানবাহন ভাংচুরের খবর আসছে। আমি মনে করি কেবল দুটো আততায়ী বাসের রুট পার্মিট বাতিল করে বা বাস আটক করলেই জনগণ সন্তুষ্ট হবে না। সুষ্ঠু তদন্ত, চালক ও মালিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ, নিহত ও আহতদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ না পাওয়া অব্দি সমগ্র জাবালে নূর-এর বাস ও তাদের রুট পার্মিট বাতিল করার দাবি তুলুন। এদের পেটে লাথি না মারা অব্দি এরা এই হত্যাযজ্ঞ নির্দ্বিধায়, নির্দয়ে ও নির্বিকারভাবেই চালিয়ে যাবে। Stop them before it’s too late!’
এদিকে দেশের অন্যতম অভিনেত্রী বন্যা মির্জা কৌশলে লেখেন, ‘কাল (৩০ জুলাই) ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামে থেমে পড়েছিল ঢাকা। তবু পথচলতি মানুষেরা কেউ বিরক্ত হননি একটুও। যেন বা আজকের ট্রাফিক জ্যাম এবং কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকা ঢাকা নগরী- আমাদের জন্য খুব জরুরি ছিল।’
ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ ১ আগস্ট আন্দোলনের কিছু ছবি পোস্ট করে মুগ্ধতা নিয়ে লেখেন, ‘কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য এয়ারপোর্ট রোডের সামনে। ছাত্ররা পুলিশের গাড়ির কাগজ-পত্র চেক করে দেখে কারোরই কোনও লাইসেন্স নাই। তারা শুধু গাড়ির গায়ে লিখে দেয়- লাইসেন্স নাই। পুলিশের লোগোটা কলমের কালি দিয়ে কেটে দেয়। কি অদ্ভুত ব্যাপারটা!’
অভিনেত্রী নওশীন নাহরিন মৌ লেখেন, ‘আজকের পর থেকে পুলিশকে সম্মান করার কোনও যুক্তি আছে? এই বাচ্চাগুলোর গায়ে যারা হাত তুলতে পারে তারা আর যাই হোক, মানুষ না।’
জ্যোতিকা জ্যোতি লেখেন, ‘“ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত, আমরা আনিব রাঙা প্রভাত… চল্ চল্ চল্…’
আর ঘরে বসে থাকা যায় না, আমার মন উত্তাল তোমাদের সাথে! আপনি আছেন তো?
৩১ জুলাই রাতে সোহানা সাবা লেখেন তার বাবা-চাচাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা টেনে অসাধারণ একটি লেখা। সেটি হলো এমন-
আমার বাবা আর বড় চাচ্চুকে ট্রেনিং এর জন্য ইন্ডিয়া পার করে দিয়ে আসেন আমার দাদুভাই৷ বাড়িতে এসে আমার দাদুভাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ, ট্রেনিং শেষে ছেলেরা দেশে আসবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে, হয়তো ছেলেরা আর ঘরে ফিরবে না। হয়তো এটাই শেষ দ্যাখা।
আমার বাবা তখন ক্লাস এইটের ছাত্র, ৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সেজো।
আমার বাবা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরেছিলেন। তবুও বাবার চেয়ে আমি বেশি অহংকার করি দাদুভাই ও দিদুমনিকে নিয়ে৷ এই দুই মহৎপ্রাণ মানুষ দেশের জন্য প্রাণপ্রিয় ছেলেদের বলি দিতেও প্রস্তুত ছিলেন।
আজকেও বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের চেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাবো তাদের বাবা-মা’কে।
আমার ছেলের বয়স এখনও ৪ বছর হয়নি।
সে আরেকটু বড় হলে আমিও তাকে আন্দোলনে পাঠাতাম।
হতাম দেশের জন্যে জীবন বাজি রাখা ছেলের অহংকারী ‘মা’!
এদিকে কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী লেখেন, ‘যারা ইন্ধন দিয়ে বাচ্চাদের মারছেন, তারা কিন্তু পরবর্তী ফলাফল ভেবেই সরকারকে ডোবাচ্ছেন। এই আগুন কিন্তু থামানো মুশকিল।’
এই সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইমরান লেখেন, ‘এ মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে? ৩টা তরতাজা প্রাণ ঝরে গেলো! বিচার কি আদৌ হবে? নাকি চলছে, চলবে?’
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লেখেন, ‘আমাদের নিরাপত্তার জন্যে শিশুরা মার খাচ্ছে। আজব ! যারা প্রতিদিন গণপরিবহনে যাতায়াত করেন তারা কোথায়? কাউকেই তো দেখছি না?
মনে রাখবেন অপরাধ যে সহে এবং অপরাধ যে করে উভয়ই অপরাধী।’
প্রসঙ্গত, এমন আরও অসংখ্য প্রতিক্রিয়া রয়েছে তারকাদের ফেসবুক দেয়ালে দেয়ালে।