বিদেশের খবর: জঙ্গি দমনে যথাযথ ভূমিকা পালন না করার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে দায়ী করেছিলেন এবং দেশটিকে দেওয়া সামরিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন; মার্কিন সামরিক একাডেমিগুলোতে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং প্রোগ্রাম’ (আইএমইটি) থেকে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটির সেনা কর্মকর্তারা কার্লাইল সামরিক একাডেমি, ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজ, নেভাল স্টাফ কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে আর প্রশিক্ষণ নিতে যেতে পারছেন না। সাইবার সিকিউরিটি ট্রেনিং কোর্স থেকেও তাদেরকে বাদ দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং পাকিস্তানের চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ‘জটিল’ আখ্যা দিয়ে রয়টার্স উল্লেখ করেছে, আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর জন্য পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার। আবার পাকিস্তান জঙ্গিদের সহায়তা করছে, এমন অভিযোগও তারা হরহামেশা করে থাকে। আফগান তালেনবানদের পাশাপাশি আমেরিকান সেনাদের ওপর হামলা চালানো হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের ওপর বিরূপ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং প্রোগ্রাম’ (আইএমইটি) থেকে পাকিস্তানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ৬৬টি আসন সংরক্ষিত ছিল। পাকিস্তানকে আইএমইটি থেকে বাদ দেওয়ার কারণে এখন ওই আসনগুলো হয় খালি থাকবে, আর না হয় অন্য দেশের সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করা হবে। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে আইএমইটি কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল। পেনসিলভানিয়াতে অবস্থিত মার্কিন সেনাবাহিনীর কার্লাইল সামরিক একাডেমিতে এ বছর দুই জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজ, নেভাল স্টাফ কলেজ এবং সাইবার সিকিউরিটি ট্রেনিং কোর্স থেকেও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য প্রেরিত সাবেক বিশেষ মার্কিন মুখপাত্র ড্যান ফেল্ডম্যান মন্তব্য করেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘খুবই অদূরদর্শী। এর কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর ভবিষ্যতে খারাপ প্রভাব পড়বে।’ পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র ডানা হোয়াইটের কাছ থেকে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের কাছে আইএমইটি বরাবরই বিদেশি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির একটি পথ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। তিনি এটি বন্ধ করে দিতে চাননি। ‘পাকিস্তানকে এভাবে বাদ দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত ফল ডেকে আনবে’ মন্তব্য করে পাকিস্তান সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর মুশাহিদ হুসেইন বলেছেন, এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে পড়তে বাধ্য হবে।’ রয়টার্স জানিয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তান ইতোমধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে।