দেশের খবর: ‘সন্ত্রাসী পথ ছাড়ি, স্বাভাবিক জীবন গড়ি’- এই শ্লোগানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় দেশের ১৪টি জেলার চারটি নিষিদ্ধ সংগঠনের ৫৯৫ চরমপন্থি সদস্য ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির কাছে আত্মসমর্পন করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তারা আত্নসমর্পন করেন। পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
যারা আত্মসমর্পন করেননি তাদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ। আজ যারা আত্মসমর্পন করলেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। আর যারা করেননি তারা কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করলে তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার চরমপন্থা অনুসরণকারীদের ভাল পথে ফেরার সুযোগ দিয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দিয়েছেন। যারা এখনও অন্ধকার জগতে রয়েছে তাদের ফিরে আসার আহবান জানান তিনি।প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারি (বিপিএম, বার) বলেন, উগ্রপন্থা ও চরমপন্থা দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। আজ যেসব চরমপন্থি আত্মসমর্পন করছেন, তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা হবে। যাতে তারা মূল স্রোতধারায় ফিরে আসতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সংরক্ষিত নারী আসনের (পাবনা-সিরাজগঞ্জ) এমপি নাদিরা ইসলাম জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, পাবনা-১ আসনের এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের এমপি আহমেদ ফিরোজ কবির, পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন, পাবনা-৪ আসনের এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক, পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, লালপতাকার আত্মসমর্পণকারী আঞ্চলিক নেতা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির ইউসুফ আলী ফকির ওরফে মিন্টু ফকিরের স্ত্রী রত্না বেগম প্রমুখ।
এর আগে আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে আর্থিক প্রণোদনা বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ৫৭৫টি দেশী অস্ত্র ও ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেন চরমপন্থিরা।
পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত চারটি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও জয়পুরহাটের আঞ্চলিক দল কাদামাটির পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলার ৬১৪ সদস্য সম্প্রতি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ৫৯৫ জন আত্নসমর্পন করেন। অন্য ১৯ জন আইনী প্রক্রিয়ার পর আত্মসমর্পন করবেন বলে আশা করছে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনী।
পুলিশ সুত্র জানায়, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, বগুড়া, নড়াইল, রাজবাড়ী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার চরমপন্থীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহী। আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, ডাকাতি, বিস্ম্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীও। আত্মসমর্পণ করলেও তাদের নিয়মিত মামলা চলবে।
এ প্রসঙ্গে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম বলেন, ‘আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর তৎপরতায় চরমপন্থী দলগুলো নির্মূল না হলেও নেতৃত্বশূন্য ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা সমাজে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে। আবারও তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারি থাকবে।’
আশির দশক থেকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দূর্গম চরাঞ্চলে ঘাঁটি স্থাপন করে। পরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
পাবনা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তঃকোন্দল ও পুলিশী অভিযানে চরমপন্থী দলগুলোর ২৯৭ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার পাবনায় বাবলু প্রামাণিকের নেতৃত্বে (পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকা) এবং ইউসুফ আলী ফকির ওরফে মিন্টু ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির ১৩২ জন চরমপন্থী সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।
আত্নসমর্পনকারীদের মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন দলনেতা। এরা হলেন- লালপতাকার ফরিদপুর- রাজবাড়ীর আনোয়ার হোসাইন খান, পাবনার মোবারক হোসেন, মো. আব্দুল আলিম, বাবলু বেপারী, রাজশাহী বিভাগের ইকবাল শেখ, আবু তালেব শেখ, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু, বগুড়ার মো. মহসিন আলী ও মো. মহসিন মল্লিক; পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পাবনার মো. ইউসুফ আলী ফকির ওরফে মিন্টু ফকির, পাবনা-সিরাজগঞ্জের মো. মনসুর আলী ও রাজশাহীর আতাউর রহমান; নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির খুলনার ফারুক হোসেন মোল্লা ও লিপু মোল্লা, সাতক্ষীরার আবদুল্লাহ আল মামুন; এবং কাদামাটি দলের জয়পুরহাটের রমজান আলী সরদার (কাদামাটি)।