দেশের খবর: সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পর এবার সোনাগাজী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল আহম্মেদ এবং মো. ইউসুফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার শাস্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইকবালকে বরখাস্ত করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় এবং ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর ফলে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির ঘটনাকে সোনাগাজীর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন সাজানো নাটক। ৬ এপ্রিল রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে বলেন আত্মহত্যার চেষ্টা। আর ফেনীর এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর কোনো পদক্ষেপই নেননি। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ওঠায় তা খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটি দুই দফা সরেজমিনে এসে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। কমিটির সদস্যরা রাফির পরিবার, মাদরাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, স্থানীয় সাংবাদিক মিলে অন্তত ৩৭ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। রেকর্ড করা বক্তব্য, আলামত ও প্রমাণ থেকে প্রত্যেকের গাফিলতি শনাক্ত করা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল রাতে পুলিশের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে ফেনীর এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিম, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এবং যৌন নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল হোসেন এবং এসআই ইউসুফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেম নিপীড়নের মামলা দায়েরের পর আসামি সিরাজ উদ দৌলাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। রাফিকে হত্যার পর তিনি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। এসপি জাহাঙ্গীর ঘটনার তদন্তে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে রাফির মৃত্যুর পর ওসির মতোই আত্মহত্যার তথ্য দেন। অভিযোগ ওঠার পর তিনি ওসি মোয়াজ্জেমকে রক্ষার চেষ্টা করেন। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল রাফির নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেননি। এমনকি ঘটনার তদন্তেও অবহেলা করেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে থেকেও এডিসি এনামুল কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ঘটনা তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে মামলা করলে উল্টো রাফির পরিবারের ওপর ক্ষেপে যান। তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত পাঁচ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিমের পরীক্ষার্থী রাফিকে নিপীড়নের ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজকে ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে নিজ মাদরাসা কেন্দ্রে গেলে রাফিকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজের সহযোগীরা। সেখানে চারজন মিলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় রাফি। এ ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিজেশন (পিবিআই), যাদের মধ্যে সিরাজসহ ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখনো তিন আসামি রিমান্ডে।