বিদেশের খবর: মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিল তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা। তাঁদের দাবি মৃত্যুর দিনে মুরসি আদালত কক্ষে ২০ মিনিট অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট তাঁদের খবরে জানায়, পরিবার ও বন্ধুদের দাবি সে সময় মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই মিসরীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন মুরসি। গত ৭ মে তিনি আদালতে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। ১৭ জুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ‘আদালতের এজলাসে হঠাৎ পড়ে গিয়ে’ মুরসির মৃত্যু হয়েছে।
মুরসির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এজলাসের খাঁচায় বিনা চিকিৎসায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মিসরের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সরকারের দাবি, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে ভুগছিলেন মুরসি। কিন্তু কারাবন্দি এ রাজনীতিককে যথাযথ চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সামরিক জান্তা। ছয় বছর দিনে ২৩ ঘণ্টা নির্জন কারাগারই ছিল তার ঠিকানা। দিনে শুধু একবার এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটির সুযোগ দেওয়া হতো তাকে। ছয় বছরে মাত্র তিনবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান মুরসি। শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে।
মৃত্যুর পর মুরসির দাফনেও বাধা দেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সারকিয়া প্রদেশের নিজ শহরে দাফনের আবেদন জানালে তা নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোরে কঠোর গোপনীয়তায় রাজধানী কায়রোর নসর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও মুরসির দুই আইনজীবী ছাড়া কাউকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু জানাজা, দাফনে বাধা দেওয়াই নয় বরং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পরিবারের সদস্যদের দেখাতে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ।
মিসরের এই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব নিষিদ্ধ ইসলামি গ্রুপ মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ছিলেন। ২০১২ সালে দেশটিতে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। তবে শাসনের এক বছরের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় সামরিক ক্যুর মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দি করা হয়। ওই সময়ের সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর সমর্থকসহ ভিন্নমত পোষণকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ সংখ্যা লাখ লাখ বলে জানা গেছে।
মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির মৃত্যুতে মিসরের শাসকদের দায়ী করেছেন।