আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৪৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী কাম পিয়ন নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৪৫ জন চাকুরি প্রার্থীর নিয়োগ ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উক্ত নিয়োগে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম পিয়ন নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়। এসব পদের বিপরীতে ২৫০টি আবেদন পড়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হচ্ছেÑ কুকরালি সরকারি প্রাথমিকদ্যালয়, রসুলপুরবালক, রসুলপুরবালিকা, রইচপুর, ঘোসপাড়া, কামলনগর, বাটকেখালি, পৌরমাছখোলা, মুন্সিপাড়া, বদ্দীপুর, মিয়া সাহেবডাঙ্গী, রাজারবাগান শান্তি নিকেতন, ইসলামিয়া, বাজুয়াডাঙ্গা, দাশপাড়া,কাঠিয়া সরকারপাড়া, শিকড়ি, ঘোনা, গোদাঘাটা, খানপুর, শিয়ালডাঙ্গা, পদ্দশাখরা, মাহমুদপুর, বড়দল, চুপড়িয়া, বলাডাঙ্গা, ছাতিয়ানতলা, রঘুনাথপুর, এগারআনি, আখড়াখোলা, ছয়ঘরিয়া, ধলবাড়িয়া, সাতানি, ফয়জুল্লাহপুর, পল্লীসুলতানপুর, উত্তর তলুইগাছা, গড়িয়াডাঙ্গা, নবাতকাঠি, আড়–য়াখালি, দৌলতপুর পারকুকরালি, রাজারবাগান ও দামারপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপরোক্ত ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টির নিয়োগ ইতিমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, ৪৯ জন নৈশ প্রহরী নিয়োগে আওয়ামীলীগ নেতা, শিক্ষক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ কয়েক জনের মধ্যে প্রার্থী ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়েছে। ভাগে পাওয়া প্রার্থীর নিকট থেকে স্ব স্ব ব্যক্তি জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। আবার কোন কোন নেতা একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৪৯ জনকে নিয়োগ দিতে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার এখন ক্ষমতায়। সরকার সমর্থক অনেক নেতা কর্মীর ছেলেরা আবেদন করেছেন। তারা টাকাও দিতে রাজি ছিলেন। কিন্ত তাদের কাছ থেকে টাকা নিলে ফাঁস হতে পারেÑ এ জন্য তাদের ছেলেদের চাকুরি না দিয়ে বিএনপি-জামাত পরিবারের ছেলেদের বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকরি প্রার্থী জানান, এই নিয়োগ বোর্ডে থাকা একজন সরকারি শিক্ষা কর্মকর্তা অপর একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নামে প্রতি পদের বিপরীতে একেকজন প্রার্থীর নিকট ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে আদায় করেছেন।
সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়ানের চুপড়িয়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে দল করে আসছিল। তার ছেলে একই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করেছেন। কিন্ত তার ছেলেকে চাকুরি না দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ইন্দিারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল ইসলামের ভাইপোকে। পরীক্ষার বোর্ড করা হয়েছে পাতানো। পেনসিল দিয়ে নাম্বার লিখে পরে তা তুলে দিয়ে যারা টাকা দিয়েছে তাদের নাম প্রথম করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরারব আবেদন করবেন।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, রাজনগর ওর্য়াড আওয়ামীলীগের সভাপতি সাঈদ আলি। তিনি জানান, তার গ্রামের হাছানুজাম্মান নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হচেছ। তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। সে জামাত-শিবির করে।
উপজেলা প্রাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ জানান, নিয়ম মেনে নিয়োগ বোর্ড করা হয়েছে। বাইরে থেকে কেউ টাকা নিলে সেটি তার দেখার বিষয় নয়। কেউ লেনদেনের সাথে জড়িত নয়। বাইরে থেকে কেউ লেনদেন করলে সেটি তার দেখার বিষয় নয়।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহম্মেদ সজল জানান, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। বোর্ডের সকল সদস্য সমান নাম্বার দিতে পারবেন। পরীক্ষায় যে বেশি নাম্বার পেয়েছে তাকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগে থাকতে কেউ টাকা দিলে তার দায়িত্ব বোর্ডের সদস্যদের নয়। নিয়ম মেনে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপরও কেউ লিখিতভাবে প্রমাণসহ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট