যশোর প্রতিনিধি: সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় দেয়া প্রতারক রাকেশ কুমার ঘোষ আটক হওয়ার পর তার প্রতারণার নানা কাহিনী প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। রাকেশ কুমার ঘোষ যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামের সন্তোষ ঘোষের ছেলে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) চিফ প্রটোকল অফিসার ও সহকারী পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন রাকেশ।
রাকেশের প্রতারণা থেকে তার বাবা-মাও বাদ যাননি। বাবার জমানো ব্যাংকের ডিপিএসের টাকা, পুলিশে চাকরির কথা বলে জমি বিক্রির চার লাখ টাকাও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে সে। এখন পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সব জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরাও হতবাক হয়েছে।
শুক্রবার সকালে রাকেশের বাবা সন্তোষ ঘোষ বলেন, মনে করেছিলাম ছেলে চাকরি পেয়েছে। এখন আমার অভাবের সংসারে সুখ আসবে। আমার স্ত্রী (রাকেশের মা) হার্টের রোগী। এবার তাকে সুচিকিৎসা করাবো। তাতো আর হলো না। ছেলে আমার সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাংকে জমানো ডিপিএসের টাকা প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে রাকেশ। পুলিশের অফিসার পদে চাকরি পেয়েছে বলে জমি বিক্রির চার লাখ টাকা নিয়েছে।
তিনি জানান, ২০১০ সালে চৌগাছার আন্দারকোটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি, ২০১২ সালে তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে রাকেশ। এরপর যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে।
সন্তোষ ঘোষ বলেন, ছেলেকে লেখাপড়া শিখালাম। আর সেই ছেলে পুলিশ পরিচয়ে এমন প্রতারণা করল?
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে একদিন সন্ধ্যায় দুটি মোটরসাইকেলে চেপে পাঁচজন পুলিশের পোশাক পরা লোক আমার বাড়িতে আসে। ছেলের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য। তারা আমাকে বলেন, ‘আপনার ছেলে ওপর র্যাংকের অফিসার হতে যাচ্ছে।’
পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসা এএসআই শহিদ আমাকে বলেন, ‘আপনার ছেলের চাকরি হয়ে গেছে। কোনো চিন্তা করবেন না।’ এরপর একদিন আমি যশোর-কুষ্টিয়া সড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার থেকে ছেলেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার জন্য রাজশাহীগামী বাসে উঠিয়ে দিই। সেখানেও একজন পুলিশের পোশাক পরা সদস্য ছিলেন। এত কিছুর পরও এভাবে প্রতারিত হলাম?
চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব জানিয়েছেন, রাকেশ ঘোষ নামে কোনো ব্যক্তির পুলিশ ভেরিফিকেশন চৌগাছা থানা পুলিশ করেনি। এএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে এএসপি পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা থাকতে হয়।
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার জানান, রাকেশ ঘোষ কয়েকদিন ধরে যশোরে অবস্থান করে এএসপি পদমর্যাদার আইজিপির প্রটোকল অফিসার পরিচয় দিচ্ছিলেন। এসআইদের সঙ্গে নিজেকে ওই পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধাও নিচ্ছিলেন। বুধবার থানার এসআই শাহিদুল আলমকে হুমকি দিয়ে একটি মামলার বিষয়ে তদবির করেন। এরপর শাহিদুল ভুয়া এএসপি রাকেশ ঘোষের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। একপর্যায়ে রাকেশ ঘোষ নামে আইজিপির কোনো প্রটোকল অফিসার বা রাকেশ বলে এএসপি নেই বলে নিশ্চিত হন এসআই শাহিদুল আলম।
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই শাহিদুল আলম বলেন, রাকেশ ঘোষ নামে আইজিপির কোনো প্রটোকল অফিসার বা রাকেশ বলে এএসপি নেই বলে নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ফোন করে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করি। এরপর শহরের দড়াটানায় তাকে দেখে আটক করে প্রথমে থানায় ও পরে এসপি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে রাকেশ নিজের প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।