দেশের খবর: স্টেনোগ্রাফার পদে যোগদান করেছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে এখন হয়েছেন নাজির। নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বর্তমানে সাকল্যে বেতন সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। চাকরিতে যোগদানকালে বেতন ছিল একেবারেই কম। ১৯৯৭ সালে চাকরিতে যোগদানের সময় সহায়-সম্পদ বলতে পৈতৃক ভিটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু এই ২১ বছরে তাঁর সম্পদ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।
তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে বৈধ আয় মাত্র ৪৬ লাখ টাকা। শুধু এই সম্পদের তথ্য নয়, ওই কর্মচারী ব্যবসার নামে গত ৯ বছরে চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে প্রায় ২৮ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর স্ত্রীর নামেও প্রায় অর্ধকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে।
করিতকর্মা এই সরকারি কর্মচারীর নাম মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। তিনি নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির পদে কর্মরত। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে এরই মধ্যে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর যে সম্পদের তথ্য জানা গেছে, বাস্তবে আছে এর চেয়েও বেশি। দুদক তাঁর সম্পদের খোঁজে তদন্তে নেমেছে।
সম্পদশালী এই কর্মচারীর আদালতে প্রভাবও কম নয়। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হলেও কারাগারে যেতে হয়নি। গ্রেপ্তারের সাত ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়েছেন। এখনো তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে। যদিও দুদক তাঁর জামিন বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছে। আর হাইকোর্ট তাঁর জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে মামলা করেছে তা অসৎ উদ্দেশ্যে করা। আমি, আমার স্ত্রী, বোন এবং বন্ধুদেরও নোটিশ দেওয়া হয় দুদক অফিসে হাজির হওয়ার জন্য। এ অবস্থায় আমি হাজির হই। কিন্তু আমার স্ত্রী ও বোনসহ আত্মীয়-স্বজনদের নামে দেওয়া নোটিশে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তা খুবই আপত্তিকর। এ কারণে আপত্তিকর শব্দ প্রত্যাহার চেয়ে দুদককে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি গত ৩১ জুলাই। এই নোটিশ পেয়ে দুদক ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’
আলমগীর বলেন, ‘২৩ বছর ধরে চাকরি করি। আমার যা সম্পদ তা বৈধভাবেই করা। অন্যদের সম্পদ আমার নামে দেখিয়ে দুদক ভিত্তিহীন মামলা করেছে। সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে হলে আদালতের বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু দুদক কোনো অনুমতি না নিয়েই আমাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আমার বিরুদ্ধে মামলা করে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে আমি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে পোল্ট্রি ব্যবসা আছে। আমি আইনগতভাবে দুদকের মামলা মোকাবেলা করব।’
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, একজন ছোট পদের কর্মচারী যদি এত বড় দুর্নীতি করেন তাহলে তাঁকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। সে কাজটিই করেছে দুদক। আপাতত মামলা করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
জানা যায়, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দক্ষিণ লালপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন ১৯৯৭ সালে স্টেনোগ্রাফার পদে যোগদান করেন। এরপর তাঁকে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডকিপার করা হয়। পরে পদোন্নতি পেয়ে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির হয়েছেন। তদবির করে ও প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্ত্রী ও ভাইকে আদালতে চাকরি দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, লাখ টাকার বিনিময়ে আরো অনেককে আদালতে চাকরি দিয়েছেন তিনি।
দুদক আপাতত আলমগীর হোসেনের নামে নোয়াখালীতে ছয় কোটি ৩৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ১৩২.৩৩ শতাংশ জমির সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে কোনো জমিই সরাসরি নিজ নামে কেনেননি।
এসব তথ্য পাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট দুদক তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। মামলায় আলমগীর হোসেনকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার জন্য তাঁর স্ত্রী নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার নাজমুন নাহার, আলমগীরের বোন আফরোজা আক্তার এবং বন্ধু বিজন ভৌমিককে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত গত ৪ সেপ্টেম্বর এক আদেশে নাজির আলমগীর হোসেনের আলোচিত সম্পদ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যেসব জমি নিয়ে অভিযোগ সেই জমি বিক্রি বা হস্তান্তর এবং ব্যাংক হিসাবে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।