এসএম বাচ্চু, তালা: তালার খানপুর গ্রামে সরকারি জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তা দখল করে মার্কেট নির্মান করা হয়েছে। ক্ষমতাসিন দলের স্থানীয় এক নেতা প্রভাব বিস্তার করে রাস্তার অর্ধেক দখল করে ১২টি দোকানের মার্কেট নির্মান করায় যাতায়াতকারীরা ভোগান্তির সন্মুখিন হচ্ছেন। এই রাস্তাটি দিয়ে খানপুর থেকে নিকটবর্তী মাজিয়াড়া বাজার, তালা উপশহর, তেতুলিয়া বাজার, নওয়াপাড়া বাজার, কেসমোতঘোনা, ঘোনা, কলিয়া, দাওনিপাড়া বাজার ও শাহাপুর বাজার সহ জেলা এবং বিভাগীয় শহরে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে প্রতিদিন শত শত মানুষ খুবই গুরুত্বপূর্ন ওই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তটি বেদখল হয়ে যাওয়ায় ভ্যান ও মটরসাইকেল সহ অন্যান্য যানবাহন নিয়ে চলাচলকারীরা প্রতিনিয়ত নিরাপদ যাতায়াতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এতে জনমনে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিলেও রাস্তা দখলকারীর বিরুদ্ধে এলাকার নিরিহ মানুষগুলো মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খানপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, খানপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে ৩রাস্তার মোড়ের পশ্চিম পাশের্^ স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারিক সরদার প্রথমে ৮টি পাকা দোকান ঘর নির্মান করেন। পরে তিনি খানপুর থেকে তালা ভায়া মাঝিয়াড়া বাজার অভিমুখে রাস্তার পাশের্^ আরো ২টি পাকা দোকান সহ ১০টি আধা পাকা দোকান নির্মান করে ভাড়া দেন। এই দোকানগুলো নির্মান করার সময় আব্দুল বারী খানপুর-তালা মাটির রাস্তার অর্ধেক দখল করেন। দখলকৃত রাস্তার উপর নির্মান করা দোকানগুলো ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়ারা সেখানে সেলুনি, মুদি, কাচামাল ও চা দোকান সহ নানাবিধ দোকান করে ব্যবসা শুরু করে। এরমধ্যে চা দোকানগুলোতে রাত দিন স্যাটালাইট চ্যানেল যুক্ত টেলিভিশন সহ সিডির মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শন করায় ছাত্র থেকে বিভিন্ন বয়সের পুরুষরা সেখানে ভীড় করছে। ফলে পুরুষগুলোর পরিবারে অশান্তি নেমে আসছে এবং ছাত্ররা লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সিদ্দিক শেখ নামের এক পথচারি মটরসাইকেল চালক বলেন, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে তালা থেকে দাওয়ানিপাড়া বাজার সহ আশপাশের এলাকায় যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তার উপর দোকান ঘর নির্মান করায় এখন নিরাপদে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যায়না।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, তালা থেকে খানপুর গ্রাম হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত জনগুরুত্বপূর্ন এই রাস্তাটির মাঝিয়াড়া মোড় থেকে খানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পিচের রাস্তায় উন্নীত হয়েছে। সেখান থেকে খানপুর বাজার পর্যন্ত বাকি রাস্তাটুকু পিচের রাস্তায় উন্নীত করার অগ্রাধিকার প্রকল্প সরকারের নেয়া রয়েছে। কিন্তু রাস্তার উপর পাঁকা, আধা পাঁকা দোকান নির্মান করা সহ আরো ৪টি আধা পাঁকা দোকান নির্মান চলমান থাকায় সরকারের পিচের রাস্তা নির্মান বাঁধাগ্রস্থ হবে। ফলে হাজার হাজার মানুষ উন্নত সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। একারনে অবিলম্বে দোকান ঘরগুলো উচ্ছেদ করে সরকারি রাস্তাটি উন্মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার মানুষ।
এব্যপারে মার্কেট মালিক আব্দুল বারীক সরদার রাস্তার জমি দখল করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত রেকর্ডীয় জমির উপর দোকান ঘরগুলো নির্মান করেছেন এবং করছেন। বর্তমান রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত জমি তার নিজস্ব সম্পত্তি এবং রাস্তার জমি দক্ষিন পাশের পুকুরের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক সমাজ সেবক ওই দাবী সঠিক নয় বলে জানান। তিনি বলেন, বর্তমান রেকর্ডীয় চলমান রাস্তাটি সম্পূর্ন সরকারি জমির উপর নির্মিত। এই রাস্তা নির্মানে ও সংস্কারে বিভিন্ন সময় সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং সরকারি টাকায় রাস্তাটি নির্মিত হয়েছিল। খুব দ্রুত এই কাচা রাস্তাটি পিচে উন্নীত হবে। তিনি আশংকা ব্যক্ত করে বলেন, বেদখলে চলে যাওয়ায় রাস্তাটি পিচে উন্নীত হওয়ার সময় বাঁধাগ্রস্থ হবে। এছাড়া রাস্তা দখল করে দোকান করায় সেখানে যেকোনও সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এবিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারি রাস্তা দখল করে অবৈধ ভাবে কেউ দোকান ঘর নির্মান করলে তা অবশ্যয় উচ্ছেদ করা হবে। একই সাথে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, যদি কেউ সরকারি রাস্তার উপর দোকান নির্মান করে তবে সে দুই ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রথমত; তার দোকান করা বাবদ খরচের টাকা নষ্ট হবে, দ্বিতীয়ত; তাকে জেল বা জরিমানার আওতায় আসতে হবে।