শিক্ষা ডেস্ক: প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) অর্থে আমোদ ভ্রমণে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ভ্রমণের জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সফরসঙ্গী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) মো. ইউসুফ আলী ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) শর্ত লঙ্ঘন করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের খুশি করতে বিদেশ সফরের এই প্রস্তাব করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘বিদেশ সফরের জন্য প্রকল্প থেকে সবেমাত্র নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন কোন কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন তা নির্ধারণ করা হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে নাম চূড়ান্ত করা হবে।’
সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করা হয় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে। প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) ২০১৭ সালের জুনে শেষ হয়। পরে নতুন করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মূল ব্যয় ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ৯২৩ কোটি ৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সুবিধাভোগীর লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৪০ লাখ নির্ধারণ করা হয়। উপবৃত্তির টাকা রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সার্ভিস চার্জ বাবদ রূপালী ব্যাংককে প্রকল্পের মোট বরাদ্দকৃত অর্থের দেড় শতাংশ দেয়া হতো। প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা সুবিধা নিতে কর্মকর্তারা দেড় শতাংশের পরিবর্তে দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে গত মাসের ২৫ তারিখ রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ করাবে রূপালী ব্যাংক। প্রতিবার ভ্রমণে ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তাও প্রকল্পের অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করবেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী তিন মাসের মধ্যে বিদেশ সফর বাবদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ভ্রমণের কথা রয়েছে। আর সচিবের নেতৃত্বে অপর একটি টিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন। বিদেশ ভ্রমণ করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য এরইমধ্যে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নাম পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত মনিটরিং অফিসার রাশেদ ইসলাম ও অসীম চক্রবর্তী এবং হিসাবরক্ষক খোকন চন্দ্র সূত্রধরসহ চারজনের নাম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে কর্মরত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালকদের নাম নেই। রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই সরকারি চাকরিজীবী হতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবকৃত কর্মচারীরা সরকারি চাকরিজীবী নন; তারা চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাকরি শেষ হয়ে যাবে। এমনকি তাদের সরকারি পাসপোর্টও নেই।
সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ পার্সপোর্ট নিয়ে তারা উন্নত দুটি দেশ ভ্রমণ শেষে আর দেশে ফিরবেন না। যেকোনো একটি দেশে তারা থেকে যাবেন। কারণ, আগামী তিন মাস পরে তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পের মেয়াদও আর বাড়ানো হবে না। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের নাম বিদেশে সফরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে তারা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা না। ডিসেম্বরের পর তাদের চাকরি না থাকায় সরকারি টাকায় বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে না। শুধু শুধু সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ নষ্ট হবে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দুটি দেশ ভ্রমণ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ্ করবে।