দেশের খবর: নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিটি।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) কমিটি তাদের প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এর আগে জামালপুর ডিসি অফিসের এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে ডিসির ঘনিষ্ঠ অবস্থার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। তখন এই ভিডিও নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারও ঘটনার সত্যতা পেয়েছিলেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ডিসি আহমেদ কবীরকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিব্রত সরকারের প্রশাসন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে প্রথমে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
পরবর্তীতে আরও ১০ দিন সময় বাড়িয়ে নেয় কমিটি। তারা ঘটনাস্থল জামালপুর পরিদর্শন করে পারিপার্শ্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করেন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত শেষে গতকাল কমিটি তাদের প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব ঢাকায় না থাকায় গতকাল এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জামালপুর জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনসহ বেশ কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিডিও সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কমিটি কয়েকটি সুপারিশও করেছে। কমিটির সুপারিশের মাঠ প্রশাসনে মনিটরিং দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনের বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলেও বিভাগীয় কমিশনারদের অফিস যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তা পালন করতে পারছে না। তাই মনিটরিং আরও জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া জামালপুরের ঘটনার পর তুমুল আলোচনায় আসা ডিসির খাস কামরা নিয়েও সুপারিশ করেছে কমিটি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডিসির কাজের ধরন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাস কামরা থাকতেই পারে। কিন্তু সেখানে দরজা বন্ধ করে খাট-পালঙ্কের আয়োজন না করে বড়জোর ইজি চেয়ার বা ডিভান টাইপের কিছু রাখা যেতে পারে। জামালপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার তৎকালীন ডিসি আহমেদ কবীর তার নারী অফিস সহায়কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর কিছু দিনের মধ্যেই তাকে ভিডিও ট্রাপে ফেলা হয়। ডিসি নিজেও এ বিষয়টি জানতেন।
সূত্র জানায়, জামালপুরের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অফিস সহায়ককে হেফাজতে নিয়ে বিষয়টি কীভাবে ঘটল সে বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আহমেদ কবীর এ ধরনের ঘটনায় হিতে বিপরীত হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে পুলিশকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি ফাঁস হলেও এত দ্রুত তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণ খুব কম। কিন্তু জামালপুরের ঘটনায় খোদ প্রশাসনের ভিতর থেকেই শীর্ষ পর্যায়ে ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি করে।
জামালপুরের ডিসির কেলেঙ্কারির পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, দোষ প্রমাণিত হলে ডিসির (আহমেদ কবীরের) বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজে যুক্ত না হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দোষ প্রমাণিত প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। গত ২২ আগস্ট জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীর ও তার নারী অফিস সহায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট ডিসিকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়।আর জামালপুরে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ এনামুল হক।