শিক্ষা ডেস্ক: গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবণিজ্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট, ভিসি কোটা চালু, নারী কেলেঙ্কারি ও নিজ বাসায় বিউটি পার্লার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগ এনে এক দফা এক দাবিতে ভিসির পদত্যাগ চাইছেন শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন নতুন এক অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ নামে নিজের ভাইয়ের ছেলেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন ভিসি নাসির।
বশেমুরবিপ্রবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ, যিনি ভিসি নাসিরের ভাতিজা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলাকালীন মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় বেশি কিছু নথিপত্র।
সেখানে দেখা গেছে, খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ ২০১৬ সালের ১১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেকশন অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর পর যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পরের বছর জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তিনি।
২০১৮ সালের ২২ জুলাই কর্তৃপক্ষ সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেই বিজ্ঞপ্তির পর ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির রিজেন্ট বোর্ডের ২৫তম সভায় খোন্দকার মাহমুদ পারভেজকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এর পর তাকে বিভাগটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও দেয়া হয়।
অর্থাৎ সেকশন অফিসার পদে যোগদানের দুই বছর পার হতে না হতেই একটি বিভাগের চেয়ারম্যান পদ পেয়ে গেছেন খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রার্থীর গবেষণাপত্র না থাকলে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হতে হলে অন্তত তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এ ছাড়া দুই বছরে যদি কেউ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হতে চান, তা হলে তার অন্তত একটি প্রকাশনা থাকতে হবে। পারভেজের এর কোনোটিই নেই।
যোগ্যতার দিক থেকেও অনেক পিছিয়ে তিনি। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের সময় তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ফল ছিল দ্বিতীয় শ্রেণি (৫০ শতাংশ ও ৪৮ শতাংশ নম্বর)।
নথি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের তোয়াক্কা না করে ও যোগ্যতা ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে দুই বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সর্বোচ্চ পদটি পেয়েছেন খ. মাহমুদ পারভেজ।
আর এসবই তিনি পেরেছেন তার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের ক্ষমতাবলে।
দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অন্য তিন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেয়া থাকলেও চেয়ারম্যান পারভেজের এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়া নেই।
পারভেজ এক বছরের মধ্যে কীভাবে সহকারী অধ্যাপক হলেন এমন প্রশ্নে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নুরুদ্দিন এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা নিয়োগ বোর্ড বলতে পারবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে নথিপত্র ছড়িয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’
পারভেজের কোনো গবেষণাপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন অফিস বন্ধ। অফিসের কাগজপত্র দেখে পরে বলতে হবে।’
একই রকম বক্তব্য দিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খ. মাহমুদ পারভেজের গবেষণাপত্র প্রকাশের কোনো তথ্য থাকতে পারে। সেটি না থাকলে তো কেউ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন না।’
এ বিষয়ে খোন্দকার মাহমুদ পারভেজের কোনো বক্তব্য নেয়া যায়নি।