বিশেষ সংবাদ: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান। তাকে আজ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই কাউন্সিলরের মূল নাম হাবিবুর রহমান। আর ডাক নাম মিজান। তবে এই দুটি নাম ছাপিয়ে তাকে ‘পাগলা মিজান’ হিসেবেই সবাই চেনেন।
হাবিবুর রহমান মিজান ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মোহাম্মদপুর এলাকায় জমিদখল, টেন্ডারবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। তিনি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে তটস্ত থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাগলা মিজান আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি দল পাল্টে রাতারাতি বনে যান ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতায়। পরে নেতাদের আশীর্বাদে মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। মাদক কারবার থেকে শুরু করে খুন-খারাবি পর্যন্ত নানা অপরাধমূলক কাণ্ডে তার নাম উঠে এসেছে বারবার।
১৯৭৪ সালে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় আসেন মিজানুর রহমান। শুরুতে মিরপুরে হোটেল বয়ের কাজ নেন। এরপর মোহাম্মদপুর এলাকার ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি শুরু করেন। চুরি করা সেই ঢাকনাই আবার বিক্রি করতেন সিটি করপোরেশনে। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি খামারবাড়ি খেজুরবাগান এলাকায় ছিনতাই করতে গেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লালমাটিয়ায় মসজিদের পাশে পুকুরে নেমে পড়েন।
পুলিশ বারবার নির্দেশ দিলেও তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেননি। কয়েক ঘণ্টা পর কোনো কাপড় ছাড়াই উঠে আসেন। এ কারণে পুলিশ তাঁকে ‘পাগলা’ আখ্যা দিয়ে ছেড়ে দেয়। তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে ‘পাগলা মিজান’ হিসেবে। ওই বছরই ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেন তিনি। ফ্রিডম পার্টির সদস্য হিসেবে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে লিবিয়া যান।
১৯৭৬ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ নেত্রী রেজিয়া বেগমের খাবার লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে প্রথমবার আলোচনায় আসেন মিজান। ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় একটি চক্র। তারা সেখানে গুলি করে এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
এ সময় শেখ হাসিনা বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা পাল্টা গুলি চালালে হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। ১৯৯৭ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৬ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়।
অভিযোগপত্রে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানকে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে মিজানের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন। ১৯৯৫ সালে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে তিনি মারা যান।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া এবং এরও পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে মিজানুর রহমান নিজের নাম পাল্টে হয়ে যান হাবিবুর রহমান মিজান। ফ্রিডম পার্টি ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
তিনি এখন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা, আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক। গড়ে তুলেছেন বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য ও বিত্তের পাহাড়। সম্প্রতি কাউন্সিল হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের। নতুন কমিটিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পেতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে তার বাসায় হামলা করেছিল যারা, সেই দলেরও একজন তিনি। অথচ সময়ের স্রোতে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। ভোল পাল্টে গেছে তার, পাল্টে গেছে নামটি পর্যন্ত।