রাজনীতির খবর: স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে “ইয়াবাখোর” হিসেবে অভিহিত করে তোপের মুখে পড়েছেন সাবেক সেনাশাসকের গড়া দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।
গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের আত্মদানের দিন রবিবার যখন তাকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সেদিনই জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গাঁর বিতর্কিত এই বক্তব্য আসে।
শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর বললেন জাপা মহাসচিব
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে "ইয়াবাখোর" হিসেবে অভিহিত করে তোপের মুখে পড়েছেন সাবেক সেনাশাসকের গড়া দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের আত্মদানের দিন রবিবার যখন তাকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সেদিনই জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গাঁর বিতর্কিত এই বক্তব্য আসে।রোববার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গাঁ বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদকাসক্ত নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
Posted by protimuhurto.com on Monday, 11 November 2019
রোববার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গাঁ বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদকাসক্ত নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
ওই অনুষ্ঠান নিয়ে জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও তার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে হটাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে ১৯৮৭ সালে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল; সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন।
বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে সেদিন মিছিলে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগকর্মী নূর হোসেন; সেদিন তার আত্মদান এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দিয়েছিল নতুন মাত্রা। শামসুর রাহমানসহ কবিদের লেখনীর বিষয় হয়ে উঠেছিল তখন নূর হোসেন। জিপিওর সামনে যে স্থানটিতে নূর হোসেন মারা গিয়েছিলেন, সেই স্থানটির নাম হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার।
১৯৮৭ সালে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাওয়ার পর তিন বছরের মাথায় গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন এরশাদ; দুদিন পর তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফেরে বাংলাদেশে।
এরশাদ পতনের দিনটি অন্য রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রে ফেরার দিন হিসেবে পালন করলেও জাতীয় পার্টি দিনটি পালন করে ‘গণতন্ত্র দিবস হিসেবে’, এরশাদ দাবি করতেন, গণতন্ত্র ‘রক্ষার জন্য’ সেদিন ক্ষমতা ছেড়েছিলেন তিনি।
রোববারের অনুষ্ঠানে এরশাদের ভাই ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘নূর হোসেন ও ডা. মিলন (৯০ এর শহীদ শামসুল আলম মিলন) হত্যার ইস্যু তুলে দেশের মানুষকে বারবার বিভ্রান্ত করা হয়। আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অপবাদ দেওয়া হয়। এর একটা সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে।’
‘নূর হোসেন এবং ডা. মিলনকে কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করেছে এবং কীভাবে হত্যা করেছে, তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।’
রাঙ্গাঁ বলেন, ‘১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, এখন আর সেই গণতন্ত্র নেই। দেশের গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে।’
পতিত সামরিক শাসক এরশাদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। তারপর মন্ত্রী হন জিএম কাদের। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন পরিবহন মালিকদের নেতা রাঙ্গাঁ। এরশাদকেও করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
কয়েক মাস আগে এরশাদের মৃত্যুর পর তার প্রতি শোক জানিয়ে সংসদে আলোচনায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ ক্ষমতা দখল করে দেশে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল।
ভিডিও সৌজন্যে – বাংলাভিশন