নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৫ বছর পর বহুল কাঙ্ক্ষিত কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ ২৯ নভেম্বর, শুক্রবার। সাজসাজ রব আর নেতাকর্মীদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এদিন। দলটির নেতৃত্বে কারা আসছেন সেদিকে নজর সবার। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলটির নিবেদিত প্রাণ ও পোড় খাওয়া পরীক্ষিত নেতা এ পদে আসবে বলে আশা করছেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। সভাপতি হিসেবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হিসেবে বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি বিগত সম্মেলনেও দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ইতোমধ্যে কাউন্সিলরদের সাথে গণসংযোগ করতে উপজেলাব্যাপী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। সভাপতি পদে দৃশ্যমান আর কোন নেতার নাম এখনো সেভাবে শোনা না গেলেও সাবেক সাংসদ ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম নজরুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। উপজেলা আ.লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন বর্ষিয়ান এ নেতা রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন নিজেকে গুটিয়ে রাখলেও গেলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে ও পরে দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর পক্ষে দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গেছে। ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার নামও অনেকের মুখে। এদিকে, শেষ সময়ে এসে সভাপতি হিসেবে নিজের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ কালাম।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু গেলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ে নির্বাচিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সভাপতি বা সম্পাদক পদে লড়তে পারছেন না।এদিকে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে এবং যারা ইতোমধ্যে কর্মযজ্ঞতা চালিয়েছেন তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক, কলারোয়া সরকারি কলেজের সর্বশেষ ছাত্রসংসদের ভিপি, কেরালকাতা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি সম মোরশেদ আলী, উপজেলা আ.লীগের সাবেক আহবায়ক ও জেলা আ.লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাজেদুর রহমান খাঁন চৌধুরী মজনু, জেলা আ’লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আরাফাত হোসেন, উপজেলা আ’লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য শেখ আমজাদ হোসেন, যুগিখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান সাহাজাদা।
কলারোয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দু’টি গ্রুপ প্রকাশ্য দৃশ্যমান। এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে আরাফাত হোসেন, শেখ আমজাদ, রবিউল হাসান ও কাজী সাহাজাদ দলটির সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন গ্রুপে সম্পৃক্ত। আর লাল্টু গ্রুপের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী বিএম নজরুল ইসলাম ও এম কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ভিপি মোরশেদ ও মজনু চৌধুরী।
এদিকে, স্বাভাবিকভাবেই দু’টি গ্রুপ থেকে দু’জন মূল নেতৃত্ব আসতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। তবে তাদের মধ্যে আশা-আকাক্সক্ষার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও প্রকাশ পেয়েছে। দলটির পরবর্তী নেতৃত্বে আসার লড়াইয়ে কঠোর অবস্থানে দুই পক্ষই। কিন্তু সেই লড়াই যেনো কোনভাবেই আক্রমনাত্মক না হয় সেজন্য সকলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
কাউন্সিল বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার মধ্যে থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন করবো। আমাদের নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকলেও সেটা উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দঘন অবস্থাতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে আমি নির্বাচিত আছি। এবারো সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আমি দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এ পদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারো কথা শুনিনি। সুতরাং আমি আশাবাদী।’দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘আমরা কাউন্সিল নির্বাচনে যাবো না। কারণ বর্তমান সভাপতি সাহেব দায়িত্ব পেয়ে বিগত ৫ বছর আগে তার ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করেছিলেন ও কাউন্সিলর নির্ধারণ করেছিলেন। সুতরাং আমরা কোন প্রহসনের নির্বাচনে যাবো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুনভাবে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন ও কাউন্সিলর নির্ধারণ করলে তাদের ভোটের রায় আমরা মেনে নেবো। উপজেলার সিংহভাগ আ’লীগে লোকজন আমার পক্ষে।’ ‘তাদের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দিবো না’ যোগ করেন তিনি। লাল্টু অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষ ইতোমধ্যে বাইরের এলাকা থেকে লোক নিয়ে এসেছে। আমরা শংকিত যে সুন্দর পরিবেশ থাকবে কিনা।’
এদিকে, যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা সুমন্নত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস। বৃহষ্পতিবার বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌরসদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেলে বিশেষ মহড়া লক্ষ্য করা গেছে।
উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠে উপজেলা আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আফম রুহুল হক এমপি। প্রধান বক্তা থাকতে পারেন খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন। বিশেষ অতিথি থাকবে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল, সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগে সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোস্তফা কামাল দৈনিক পত্রদূতকে জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কলারোয়া ও আশাশুনিতে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রিট হিসেবে এসএম মোস্তফা কামাল সার্বক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো রকম বিশৃংখলা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট