আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানে ব্লøাস্ট নামক এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। খরচ তুলে আনার চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল সাতক্ষীরায়। বাতাসে ধান গাছের দোল দেখে কৃষকের মনেও দোলা লেগেছিল। কিন্তু ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমনে ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের এখন মাথায় হাত। সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ থাকে বছরের বেশীর ভাগই সময়। বোরো ধানের আবাদই অনেক কৃষকের একমাত্র চাষ। এপ্রিল মাসে ধান পাঁকতে শুরু করে। কৃষকেরা অনেক আশা করে ছিলেন বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবেন। তবে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমনে ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকের মুখের হাসি এখন রুপান্তরিত হয়েছে বোবাকান্নায়। কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি তাদের খরচ হয়েছে থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা করে অন্যের জমি হারি নিয়ে তারা বোরো ধান চাষ করেছেন। এর ফলে তারা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে বাড়ীর গরু-ছাগল, গাছ-গাছালি বিক্রি করে, অনেকে আবার বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। ফসল সংগ্রহের এই সময় ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে এখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৭৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫০ হেক্টর বেশী। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দু’ লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নূর হোসেন বোরো চাষ করেছেন চার বিঘা জমিতে। বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা করে লীজের টাকা দিতে হয়েছে তাকে। জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকদের মুজুরি বাবদ খরচ করেছেন বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চার বিঘা জমিতে তার ৫২ হাজার টাকা খরচ হলেও ১০ হাজার টাকার ধান পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। তিনি জানান, তিন সপ্তাহ আগে যশোরের মনিরামপুরে বোরো খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। তার পর দেখা দেয় সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। এ খবর তার কাছে পৌঁছানোর এক দিন যেতে না যেতেই তার খেতেও ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে ফলন্ত ধানের শীষগুলো দিনে পর দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শই তাদের কাজে লাগছে না বলে দাবি করেন তিনি। একইভাবে দেয়াড়া গ্রামের আইয়ুব হোসেন, ঘলঘলিয়া গ্রামের সাহেব আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, ধান লাগানোর কিছুদিন পর পাতায় এক ধরণের চোখ দেখা দেয়। চোখের পাশে কয়েকটি সাদা দাগও তারা লক্ষ্য করেন। এটাকে পাতা ব্লাস্ট রোগ বলা হয়। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ধানের ফুল আসার সাথে সাথে শীষের নীচের গীট শুকিয়ে যেতে দেখেছেন। এটাকে ধানের নেক ব্লস্ট বলা হয়। তবে পাতা ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্টের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি তাদের এলাকায়। তবে দু’ সপ্তাহ আগে থেকে গীট ব্লাস্ট(ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাওয়া) রোগ যেভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে তাতে শুধু দেয়াড়া ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। ছত্রাকনাশক নাটিবো, টাটাবো ও টু-ওভার ¯েপ্র করেও মাঠের পর মাঠ সাদা হয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের রমজান আলী, সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, প্রায় এক মাস আগে থেকে কপোতাক্ষেও দু’তীরের কৃষকদের ধান খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। বিষয়টি তারা ইউনিয়ন সহকারি কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে জানিয়েছেন। পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এতে কোন কাজ হয়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শও কোন কাজে লাগছে না। এমনকি জেলা খামার বাড়ির কৃষি কর্মকর্তা প্রকৃত ক্ষতি মানতে চাইছেন না। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে ধানে দানা বাঁধা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ধান পেকে যাওয়ায় কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায় ব্লাস্ট রোগও দেখা দিয়েছে। এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। কৃষকদের ছত্রাকনাশক ¯েপ্র , জমিতে পানি ধরে রাখা, কখনও জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের মাঝে লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে বলে তিি জানান। তিনি আরো জানান, কৃষক ভাইরা যদি এ সব পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাহলে উৎপাদনে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট