মেলা পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বাগেরহাট এলাকার মানিক শিকদার মেলায় কোন অশ্লীল নগ্ন নৃত্য ও জুয়া হচ্ছে না দাবি করে বলেন, মেলায় লটারি, সার্কাস, যাত্রা পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষকে ৬ লাখ এবং অন্যদের আরো চার লাখসহ মোট ১০ লাখ টাকা তার খরচ হয়েছে।
আসাদুজ্জামান : সিকান্দার আবু জাফর, বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি। তার শক্তিশালী লেখনী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালির প্রেরণার উৎস ছিল। তিনি জনতার সংগ্রামে আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তার স্মরণে সরকারিভাবে আয়োজিত সিকান্দার মেলায় কবিকে কর্মকে নিয়ে যে প্রচার-প্রচারণা, আলোচনা, গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী সেমিনার হওয়ার কথা তার পরিবর্তে এই মেলাকে সামনে রেখে অনৈতিকভাবে গরিব জনসাধারণকে ঠকিয়ে সস্তা বিনোদনের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ প্রথমবারের মত সরকারি পৃষ্টপোষকতায় জাতীয় পর্যায়ের এই স্বনামধন্য কবির জন্মবার্ষীকি পালনের সিদ্ধান্তে সবার আশা ছিল এখানে কবির সৃষ্টিকে নিয়ে ব্যাপক উৎসব হবে, সাথে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনসাধারণের বিনোদনের ব্যবস্থা হবে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়ায় কবি সিকান্দার আবু জাফরের ৯৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে মেলাকে কলুষিত করছে সেই গণলুণ্ঠনকারী র্যাফেল ড্র। এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মেলায় এসব চলার ফলে একদিকে, যেমন বিঘিতœ হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া, অন্যদিকে সেখানে লটারির নামে সাধারণ জনগণের পকেট কেটে করা হচ্ছে নিঃস্ব। এর ফলে সামাজিক অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।
সরেজমিনে মেলার মাঠ তেঁতুলিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মিনি সার্কাস, নাগরদোলা, যাত্রা, যাদু ও লটারির নামে সেখানে চলছে সাধারণ জনগণের পকেট কাটার মহা উৎসব।
এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রতিবছর সিকান্দার মেলার নামে এখানে যাত্রা, লটারী ও পুতুল নাচের নামে ছদ্মবেশে চালানো হয় নগ্ন নৃত্য। চরমপন্থি এলাকাখ্যাত তালা উপজেলার এ মেলাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠার আশংকা করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
তালার সিনিয়র সাংবাদিক ও জেলা পরিষদের সদস্য মীর জাকির হোসেন বলেন, সিকান্দার মেলার নামে অশ্লীল যাত্রা, পুতুল নাচ, যাদু ও ওপেন লটারি চলার কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে যারা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে।
মেলা পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বাগেরহাট এলাকার মানিক শিকদার মেলায় কোন অশ্লীল নগ্ন নৃত্য ও জুয়া হচ্ছে না দাবি করে বলেন, মেলায় লটারি, সার্কাস, যাত্রা পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষকে ৬ লাখ এবং অন্যদের আরো চার লাখসহ মোট ১০ লাখ টাকা তার খরচ হয়েছে।
তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার এ ব্যাপারে অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, আমার এখানে মেলা হচ্ছে এবং মেলার ডেট বাড়ানো হচ্ছেÑ অথচ এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হচ্ছে না। লটারির নামে এলাকার টাকা
পয়সা লুট করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করে আরো বলেন, সামাজিক অবক্ষয় হওয়ার মত কর্মকা- বন্ধ করা উচিত।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন জানান, সেখানে কোন অশ্লীল কিছু পরিবেশন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে, তিনি অবৈধ র্যাফেল ড্র বা লটারির ব্যাপারে অফিসিয়াল কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জানার জন্য তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফূলাহর কাছে তার ব্যবহৃত ০১৭১৫-২৬৮০৭৫ নাম্বারের মোবাইল ফোনে রিং দিলে তার এপিএস জাহাঙ্গীর জানান, “স্যার স্কাউটদের একটি প্রোগ্রামে আছেন আধা ঘন্টা পরে রিং করেন।”
উলেখ্য, গতবছর একই স্থানে কবির জন্মবার্ষীকি উপলক্ষে নগ্ন নৃত্য আর জুয়ার আসরের সচিত্র প্রতিবেদন সাংবাদিকরা প্রকাশ করলে তৎকালীন প্রশাসন মেলা প্রাঙ্গণে অভিযান চালিয়ে নগ্ন নৃত্য পরিচালনাকারীদের ও জুয়াড়িদের আটক করেন।