দেশের খবর : গরুর কৃত্রিম প্রজনন উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে এবার বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ৩৫ কর্মকর্তা। এজন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। গড়ে প্রত্যেকের পেছনে বিদেশ সফরে খরচ হবে সাড়ে ৫ লাখ টাকারও বেশি।
এ খাতে মূল অনুমোদিত প্রকল্পের তুলনায় সফরকারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে ১০ জন। বরাদ্দও বাড়ছে ৬৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। তবে সার্বিকভাবেও প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে ২০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় ৭৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। মেয়াদও বাড়ছে দুই বছর।
‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ব্যাপারে এ আয়োজন করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফরের আয়োজন বন্ধ করা উচিত। যেহেতু করোনা শুরুর আগে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে, সেহেতু এটি একনেকে উপস্থাপনের আগে অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার ছিল। মহামারীর কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে একান্ত অপরিহার্য না হলে বিদেশ সফরের মতো অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করার সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, দেশি গবাদি পশুর মান উন্নয়ন, দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
এটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোনীর মাধ্যমে ২০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৪৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক শিক্ষা সফর বা প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই অর্থে ২৫ জন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু এখন নতুন করে ২৫ জন কর্মকর্তার স্থলে চারজন বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৯ জন।
এছাড়া একেবারেই নতুনভাবে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডায় ৩০ দিনের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য আরও চারজন কর্মকর্তা যুক্ত করা হয়েছে। তাদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
সেই সঙ্গে এসব দেশে ‘ইটি’ কাজের জন্য দুইজন কর্মকর্তার এক মাসের বৈদেশিক ল্যাব প্রশিক্ষণের প্রস্তাব রয়েছে। এদের জন্যও ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে বিদেশ ভ্রমণকারী কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়েছে ১০ জন এবং ব্যয় বেড়েছে ৬৯ লাখ ১২ হাজার টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরের আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রকল্পে অযাচিত ব্যয় প্রতিরোধের বিষয়ে আমরা কঠোর। এসব প্রকল্প আগেই প্রক্রিয়াকরণ হয়েছে।
তাছাড়া বিদেশ ভ্রমণে বরাদ্দ থাকলেই যে কর্মকর্তারা যেতে পারবেন, সেটি ঠিক নয়। সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া কেউ বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণে যেতে পারবেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একান্ত অপরিহার্য না হলে এখন বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাতিল করা হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু গত জুন পর্যন্ত এটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ২২৪ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, যা মূল অনুমোদিত মোট ব্যয়ের ৮৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম অধিক সম্প্রসারণের জন্য অতিরিক্ত এক হাজারটি ইউনিয়ন সংযুক্ত করা হচ্ছে।
এছাড়া পাঁচটি পিউর শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় এবং ১০টি হল স্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় ক্রয় আমদানির সংস্থান অন্তর্ভুক্তকরণ, ২০টি পিউর ফ্রিজিয়ান ও ২০টি পিউর শাহীওয়াল জাতের গাভী বা বকনা আমদানি, ২০০টি দেশী বকনা বা গাভী ক্রয়ের সংস্থান অন্তর্ভুক্তকরণ, ৩৫ হাজার মাত্রার শাহীওয়াল ও ৩২ হাজার মাত্রার ফ্রিজিয়ান সিমেন আমদানি, ইনব্রিডিংসহ অন্যান্য জেনেটিক রোগ দমনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গবাদি প্রাণী চিহ্নিতকরণ, এমআইএস তৈরি এবং এর ব্যবহার কার্যক্রমের সংস্থান অন্তর্ভুক্তিকরণ, অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৮৪০ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তকরণ, সভারে নির্মাণাধীন টোটাল মিক্সড রাটিন (টিআরএম) প্রদর্শনী প্ল্যান্টের অসম্পন্ন কাজ সমাপ্তকরণ এবং আনুষঙ্গিক কার্যক্রম যোগ করায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে।