অনলাইন ডেস্ক : সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটার নাসিরের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মী যে কাগজ দিয়েছেন তাতে দেখা যায় তিনি ২০১৬ সালে রাকিব হাসানকে ‘স্ত্রী কর্তৃক তালাক নোটিশ’ দিয়েছেন। অন্যদিকে তার পাসপোর্টে দেখা যায় ২০১৮ সালে রাকিব হাসানকে স্বামী ‘উল্লেখ’ করে ‘পাসপোর্ট’ ইস্যু করেছেন তামিমা।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া ‘স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাকের নোটিশ :
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের হাতে একটি কাগজ দিয়েছেন তামিমা তাম্মী, ক্রিকেটার নাসির এবং তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ বিন আনওয়ার। যে কাগজের শিরোনাম ‘স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাকে নোটিশ’। যেটিতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর তামিমা সুলতানা তাম্মী তার স্বামী রাকিব হাসানকে তালাক প্রদানের নোটিশ দিয়েছেন। তবে রাকিব এটি পুরোপুরি অস্বীকার করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার ডকেটে সংযুক্ত তামিমার ‘পাসপোর্ট’ যা বলেছে :
আদালতে ক্রিকেটার নাসির ও তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে মামলার ডকেটে একটি নথী সংযুক্ত করেছেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। যেটিতে তামিমার স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে ‘রাকিব হাসান’। একই সঙ্গে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাকেও স্বামী রাকিব হাসানের নাম উল্লেখ রয়েছে।
পাসপোর্টটি প্রদান করার তারিখ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে- ৪ মার্চ ২০১৮ সাল। যেটির মেয়াদোত্তীর্ণ ৩ মার্চ ২০২৩ সালের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
পাসপোর্টের ধরণ বলছে, এটি রি-ইস্যু করা। পাসপোর্টটির বর্তমান নম্বর বিআর দিয়ে শুরু হয়ে ৫৩ ডিজিট উল্লেখ করে শেষ হয়েছে। অন্যদিকে তার পুরাতন পাসপোর্টটি বিএ দিয়ে শুরু হয়ে ১১ ডিজিট উল্লেখ করে শেষ হয়েছে।
এই পাসপোর্ট ও তালাক নোটিশের স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেও দেখা যাচ্ছে।
রাকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান যা বললেন :
এ বিষয়ে রাকিব হাসানের আইনজীবী ইশারত হাসান আরটিভি নিউজকে বলেন, তামিমা সুলতানা আমার মক্কেল রাকিবের স্ত্রী হয়েও তাকে তালাক না দিয়ে ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেছেন। যা আইনসিদ্ধ নয়। এখানে রাকিব হাসান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে এবং তার মানহানি হয়েছে।
এ সংক্রান্তে পাসপোর্টের কাপিসহ অন্যান্য নথী আমরা মামলার ডকেটে সংযুক্ত করেছি। এসব ডকুমেন্ট আদালত বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা পূর্বক নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা আশাবাদী। ইতোমধ্যে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটি তদন্ত করে আগামি ৩০ মার্চ প্রদিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মামলটিতে যা উল্লেখ রয়েছে :
২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তামিমা পেশায় সৌদিয়া এয়ার লাইন্সের কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে জানেন। মামলায় আরও বলা হয়, তামিমা ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার শিশু কন্যা মানসিক বিপর্যস্ত। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে।
নাসির ও তামিমার আইনজীবী ব্যরিস্টার আসিফ যা বললেন :
আরটিভি নিউজের হাতে আসা এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তালাকের নোটিশ ও পাসপোর্টের স্থির চিত্রের বিষয়ে তামিমা সুলতানা ও নাসিরের আইনজীবী ব্যরিস্টার আসিফ বিন আনওয়ার আরটিভি নিউজকে বলেন, যে পাসপোর্টের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমি দেখিনি। ওই পাসপোর্টটি সঠিক কিনা তা’ও আমি জানি না। আমাকে জানতে হবে, পাসপোর্টটা ঠিক আছে কিনা। রাকিবের আইনজীবী পাসপোর্টের কপি মামলার ডকেটে সংযুক্ত করলে এটা ওনার ব্যাপার। এই পাসপোর্টে দেখার পর আমি এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে মন্তব্য করতে পারবো। এই বিষয়ে আমার ক্লাইন্টকে ইন্সট্রাকশন দিতে হবে, তার কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে হবে। এটি যদি উনি (রাবিকের আইনজীবী) আদালতে দাখিল করে থাকেন তাহলে, আদালতে আমার মক্কেলের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য পেশ করা দরকার, আমরা তা নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে প্রদান করবো।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর যা বললো :
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু আরটিভি নিউজকে বলেন, পাসপোর্টে স্বামীর নামের স্থান যার নাম উল্লেখ রয়েছে, ডকুমেন্ট বলছে ওই ব্যক্তিই পাসপোর্টধারী নারীর স্বামী। ডিভোর্স হয়ে থাকলে তাকে বৈবাহিক অবস্থা হালনাগাদ করে তালাকপ্রাপ্ত উল্লেখ করা দরকার ছিলো। তবে এটি যদি রি-ইস্যু করা পাসপোর্ট হয়ে থাকে। তাহলে হতেও পারে ভুলে এটি কারেকশন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন নাসির ও তামিমা :
ক্রিকেটার নাসির জানান, দীর্ঘ পরিচয়ের পর সব জেনেশুনেই তামিমাকে বিয়ে করেছেন।
তিনি বলেন, আমি তামিমাকে চিনি প্রায় চার-সাড়ে চার বছর ধরে। সে আমার খুব ভালো একটা বন্ধু ছিলো। তারপর আমাদের প্রেম এবং বিয়ে করি। আমরা আইনগত ভাবে ইসলামী শরিয়াহ মেনে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করেছি। আমাদের মনে যদি কিছু থাকতো এভাবে ওপেনলি বিয়ে করতাম না। আমরা সবাইকে জানিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে করেছি। তামিমার আগে বিয়ে হয়েছিল, বাচ্চা আছে, ডিভোর্স হয়েছে। সব জেনেই তাকে বিয়ে করেছি। ডিভোর্স পেপার দেখেই বিয়ে করেছি। রাকিব সাহেব যেসব বলেছেন সেসব ঠিক না। আগে তামিমা উনার ছিল এখন তামিমা আমার। সে যেই হোক আমার ওয়াইফকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে কাউকেই ছাড় দেব না এবং সেটা আইনের মাধ্যমে। আমরা যা করেছি সবাইকে জানিয়ে করেছি। লুকোচুরি তো করিনি। সে (রাকিব) সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে যেসব করছে এসব ঠিক হয়নি। আমার বেলায় এমন হলে আমি সোজা থানায় গিয়ে মামলা করতাম।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তামিমা বলেছেন, কারও প্ররোচনা নয়, আইন ও শরিয়া সম্মতভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে কারও প্ররোচনায় সমালোচনা করবেন না।
উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বিয়ে করেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। গেল বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হলুদ সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠে স্বামীকে রাকিবকে তালাক না দিয়েই ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে বিয়ে পিড়িতে বসেন স্ত্রী তামিমা শবনম।
গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাইসা ইসলাম বাবুনি নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যেখানে তামিমার স্বামী রাকিবের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, এখনও তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের ঘরে রয়েছে ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তানও। তালাক না দিয়ে নতুন বিয়ে করায় তামিমার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাকিব।