ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারের নজরদারিতে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা। যেকোন সময়ে যেকোনও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন এসব পরিবারের সদস্যরা বলে মনে করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা।
জানা গেছে, পরিবারগুলোর সদস্যদের অতীত ও বর্তমান সব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এদের কে কোথায় লেখাপড়া করেছেন। কোথায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের কার কোথায় অবস্থান। তাদের যোগাযোগ কার সঙ্গে এবং বিদেশি কোন কোন দেশে যাতায়াত বেশী ও কী কাজে বিদেশ যাতায়াত করেন। এসব খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এসব পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু কারা এসবেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
জানাগেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।
সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, মীর কাসেম আলীর পরিবার যথেষ্ট সম্পদশালী। অর্থ-বিত্ত দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে যেকোনও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে পারে এ পরিবারটি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারের ও পাকিস্তানপন্থী, ফলে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করতে পারে এই পরিবার, এমন আশঙ্কা রয়েছে সরকারের ভেতরে। আর গোলাম আযমের সন্তান একটি বিশেষ বাহিনীতে বড় কর্মকর্তা ছিলেন। তাই তার ‘নেটওয়ার্ক’ রয়েছে মনে করে এ পরিবারটিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে সরকারে।
সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, এসব পরিবারের সদস্যরা বসে থাকবেন না। সময় সুযোগ পেলেই তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের যেকোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন। তাই তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, এমন কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সদস্যদের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তারা সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে এবং কিছু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য ইতোমধ্যে সরকারের নজরে এসেছে।’
তিন পরিবারের নজরদারিতে যারা
গোলাম আযম: সদ্যপ্রয়াত শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের ছয় ছেলে। বড় সন্তান আব্দুল্লাহ হিল মামুন আল আযমী, দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন, তৃতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী, চতুর্থ ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় অবসরে যান। পঞ্চম ছেলে আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী, ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী।
মীর কাসেম আলী: সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের অর্থ যোগানদাতাদের শীর্ষনেতা ছিলেন মীর কাসেম আলী। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে মোহাম্মদ বিন কাসেম (সালমান), তিনি পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছেন। আরেক ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান), তিনি লন্ডনে বার এট ল’ সম্পন্ন করেছেন। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা মাস্টার্স করেছেন হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে। অপর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া, আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন।
সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরীর পরিবার: সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী। ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী। মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী। দুই বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরী ও হাসিনা কাদের চৌধুরী। ফাইয়াজের স্ত্রী দানিয়া খন্দকার, মেয়ের জামাই জাফর খান এবং সাকার ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।