বিদেশের খবর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানির সমর্থক সেদেশের এমন নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং এটা সম্ভবও নয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে- এ প্রসঙ্গ তুলে একটি প্রভাবশালী দেশ এখন আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের সমর্থক ও সেদেশে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সহায়তাকারী এমন আফগান নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে এবং পরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিছু আফগান নাগরিককে সাময়িকভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানান। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় জানায়, তারা বাংলাদেশসহ কিছু বন্ধু দেশকে এ অনুরোধ জানিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ জানতে চেয়েছিল কোন কোন দেশকে তারা এ অনুরোধ জানিয়েছে। কত আফগান নাগরিককে কত দিনের জন্য রাখতে হবে। এ বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, বাংলাদেশে আফগানিস্তানের বেশ কিছু নাগরিককে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ এসেছে। আমরা এ ধরনের অনুরোধ কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভবও নয় বলে জানিয়ে দিয়েছি।
তবে কারা এই প্রস্তাব দিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে নাম উল্লেখ না করে আবদুল মোমেন বলেন, ‘একটি শক্তিধর দেশ দিয়েছে।’
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ অন্য এলাকায় বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের যারা কর্মরত আছেন, আমার জানা মতে তারা সবাই নিরাপদে ও ভালো আছেন।’
এদিকে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই আফগানিস্তানের দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমাদের বিশ্বাস এর প্রভাব এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও যেতে পারে। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে বরাবরই ভাগ করে নেয়। আফগানিস্তান সার্কের সহযোগী সদস্যরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের সরকার ও জনগণ যে সহযোগিতা দিয়েছে তা বাংলাদেশ সবসময় স্মরণ করে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নীতি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য দেশটির উন্নয়নকেও টেকসই করতে হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজেকে সম্ভাব্য উন্নয়ন সহযোগী এবং আফগানিস্তানের বন্ধু মনে করে। আমরা মৌলিক শিক্ষা, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আইসিটি সক্ষম পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি প্রভৃতি ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের সেরা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপর তাদের দেশ পুনর্নির্মাণ এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পেরে বাংলাদেশ খুশি হবে। আমরা আফগানিস্তানের সব স্টেকহোল্ডারের বিদেশি নাগরিকসহ সবার নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শান্তি ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।