বিদেশের খবর : বিভিন্ন দেশের নাগরিকসহ তাদের আফগান সহকর্মীদের দ্রুত কাবুল থেকে সরিয়ে আনার মধ্যে আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করা তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরের দিকে জনস্রোত ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।
হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ হাজার জনকে কাবুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা মূলত মার্কিন সৈন্যদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেছে। গত রোববার তালেবানের নাটকীয়ভাবে কাবুল দখল করার ঘটনা বহু পশ্চিমা সরকারকে বিস্মিত করেছে।
গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অভিযানে সহায়তা করা আফগানসহ হাজার হাজার মানুষ কাবুল ছাড়ার জন্য উদগ্রীব। বিমানবন্দরের চারদিকে মোতায়েন করা তালেবান যোদ্ধারা আফগানদের কাগজপত্র ছাড়া বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
ওদিকে, কাবুলের ডাচ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা হচ্ছে, কারণ তাঁরা বলেছেন—তাঁরা যে চলে যাচ্ছেন, সেটি তাঁদের আফগান সহকর্মীদের বলার মতো সময় পাননি।
ডাচ মিলিটারি ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্নে-ম্যারি স্নেলস বিবিসিকে বলেছেন, ‘দোভাষী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য হয়তো অল্প সময়ই হাতে আছে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সরিয়ে আনতে না পারলে সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
অন্তত ১৫টি দেশ কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে কাবুলে উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজগুলো গত কয়েক ঘণ্টায় কাবুল ছেড়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এখন বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা চলতি মাসের মধ্যেই অন্তত ত্রিশ হাজার ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
গতকাল বুধবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়া।
সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, অন্তত ১১ হাজার মার্কিনি এখনও আফগানিস্তানে আছে।
বুধবার সকালে বিবিসির তথ্য অনুযায়ী কোন দেশের কতজন ফিরে এলেন
যুক্তরাষ্ট্র : পাঁচ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার মানুষকে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাজ্য : রোববার থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ মানুষকে কাবুল থেকে ফিরিয়েছে দেশটি। পর্যায়ক্রমে ২০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
জার্মানি : একশ আফগানসহ মোট ৫০০ জনকে সরিয়ে এনেছে দেশটি।
ফ্রান্স : ১৮৪ জন আফগানসহ ২০৯ জনকে সরিয়ে এনেছে ফ্রান্স।
স্পেন : ৫০০ জনকে সরিয়ে এনেছে ইউরোপের দেশটি।
নেদারল্যান্ডস : নিজ দেশের ৩৫ জনকে এনেছে। এক হাজার আফগান কর্মীকে সপরিবারে নেদারল্যান্ডসে আনার কথা জানিয়েছে দেশটি।
ডেনমার্ক : ৮৪ জন।
হাঙ্গেরি : ২৬ জন।
পোল্যান্ড : ৫০ জন।
চেক রিপাবলিক : আফগান সহকর্মীসহ ৪৬ জনকে ফিরিয়ে এনেছে দেশটি।
জাপান : দূতাবাসের ১২ জনকে।
অস্ট্রেলিয়া : আফগানসহ ২৬ জনকে। সব আফগান কর্মীদের সবাইকে সহযোগিতা করা সম্ভবপর হবে না বলে জানিয়েছে দেশটি।
ভারত : ১৭০ জনকে।
তুরস্ক : ৫৫২ তুর্কি নাগরিককে।
সুইজারল্যান্ড : ২৩০ জন আফগানকে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ড।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নর ফরেন পলিসি প্রধান জোসেফ বোরেল বলছেন, ‘আমরা আফগান সহকর্মীদের ফেলে আসতে পারি না। তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সব কিছু করছি আমরা।’