ন্যাশনাল ডেস্ক : নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকাকে দুটিভাগে ভাগ করে অবশেষে ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি। নতুন কমিটি পেয়ে চাঙ্গা নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি অন্তরালে নয়, নেতাদের চান মিছিলের সামনে, মাঠে, রাজপথে। মহানগরের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, প্রভাব বিস্তারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার দীর্ঘ দিনের অম্লমধুরতার কথা জানেন সকল রাজনৈতিক সতেচন মানুষ।
এই কমিটির মাধ্যমে প্রথমবারের মত বিএনপির রাজনীতিতে অবসান ঘটলো দীর্ঘদিন ধরে থাকা আব্বাস খোকা যুগের। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থতার দায় ও এসেছে এই দুই হেগেটের উপর। লড়ছেন অনেকগুলো মামলা। করেছেন কারাভোগ। অসুস্থ হয়ে সাদেক হোসেন খোকা এখন আমেরিকায়। আর মির্জা আব্বাস কিছু সময় অন্তরালে, কখন আদালতে হাজিরা কখনও দলীয় অনুষ্ঠানে।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এর আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট, অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব এবং নবগঠিত কমিটি নিয়ে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর হতাশার কারণে শেষ পর্যন্ত এই কমিটি কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
সংগঠন গোছানো এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এখনও কোন হতাহত বা সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। নেতাদের আসা তরুণ নেতৃত্ব সাফল্য আনবে আন্দোলন সংগ্রামে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণরা অগ্রাধিকার পেয়েছে। শুধু তাই নয়, যেসব পদ এখনো শূন্য আছে সেখানেও কাউকে নেয়ার সুযোগ থাকবে। সব দিক থেকে এই কমিটি ভালো হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে যে আন্দোলন, সংগ্রাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলছে সেটাকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা প্রত্যাশা করছি যে তারা সফলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঢাকা মহানগরের এই কমিটি হয়েছে। আমি মনে করি, ভালো কমিটি হয়েছে। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে এই কমিটি আগামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান হোসেল বলেন, আমরা সবাই মিলে একত্রে কাজ করবো। এখানে কোনো ক্ষোভ থাকবে না। কারো দুঃখ থাকবে না। এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের যে প্রত্যাশা ঢাকা মহানগর বিএনপির কাছ থেকে। সে প্রত্যাশা পূরণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং ইনশাআল্লাহ আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণে সফল হবই হব। তা ছাড়া যারা পদ পায়নি তাদের এখনো সুযোগ আছে। সে ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উত্তরের সভাপতি সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ূম বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা দিক নির্দেশনা দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন সফল করা বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। ১৯৯৬ সালে খোকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৪ মে তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন ওঠে। কারণ ঢাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ঢাকা কমিটিকে ব্যর্থ বলেছিলেন।
এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মহানগরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ওই বছরের ১৮ জুলাই খোকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি করা হয়।