নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ আগামি ৪ মার্চ শনিবার সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জনসভা উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠণটির সাতক্ষীরা জেলা শাখা বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা ম্যানগ্রোভ হলরুমে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি কমঃ মহিবুল্লাহ মোড়লের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কমঃ মঈনুল হাসান, কমঃ প্রকৌশলী আবিদুর রহমান, কমঃ পাল সুভাশিষ, জেলা কমিটির সদস্য নির্মল সরকার, যুব মৈত্রীর জেলা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার শীল, সাধারণ সম্পাদক মফিজুল হক জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
মূল বক্তব্য পাঠকালে অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন. বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি বিভাগীয় শহর ও জেলায় জেলায় জনসমাবেশ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী ৪ শনিবার দুপুর ২টায় সাতক্ষীরার শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংগ্রামী সভাপতি সাংসদ কমঃ রাশেদ খান মেনন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশকেও এর ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। এসব ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বাড়ছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর মত বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রকাশ করে। কিন্তু এই উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামাঞ্চলের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষ পাচ্ছে না। যাদের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক ও গ্রামের কৃষক-ক্ষেতমজুররা এই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দফায় দফায় তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রে ও দ্রব্যমূল্যের উপর। কৃষি উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। অপর দিকে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। একদিকে যেমন কৃষকের সার, বীজ, কীটনাশক কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের নিয়ন্ত্রণে অন্যদিকে তেমনি এ সকল সার, বীজ ও কীটনাশক ভেজালে পরিপূর্ণ। তাছাড়া কৃষিতে রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট যারা রাতারাতি ইচ্ছেমত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করছে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার ব্যবস্থায় নেই সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে এবং সংসদে পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা ষাটোর্ধ্ব সকল নাগরিককে পেনশন স্কীম, খেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন ও সারা বছর কাজের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। সরকার ওএমএস ১০ কেজি ও ৩০ কেজি চালের কার্ড চালু করলেও সেখানে চলছে দলীয়করণ ও দুর্নীতি। সেজন্য সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি তাদের।
এছাড়া সরকার সম্প্রতি পেনশন স্কীম আইন পাশ করেছে যা আগামী জুন থেকে পরীক্ষামূলক চালু হবে, যেখানে বলা হয়েছে ১৮ থেকে ৫০ বছরের নাগরিক মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে জমা দিলে ৬০ বছর পর ঐ নাগরিক পেনশন সুবিধা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন গরিব মানুষ মাসে আট থেকে নয় হাজার টাকা আয় করে কিভাবে মাসে এক হাজার টাকা করে পেনশন স্কীমে জমা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবে। সে কারণে আমাদের দাবী চাঁদাবিহীন পেনশন স্কীম চালু করতে হবে।
১৪ দলীয় জোট সরকার ২০০৮খ্রি. সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। বিচারের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি জামায়াত ইসলামী তাদরে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকার করতে পারেনি। যার মাধ্যমে তারা অর্থপাচার ও সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করলেও তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করতে পারেনি। প্রকারন্তরে হেফাজতে ইসলাম নামের সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মাথানত করে আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক লেখাগুলোকে বাদ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক করা হচ্ছে।
অপরদিকে ২০১৩-১৪ খ্রি. জামায়াত ইসলাম দ্বারা সংঘঠিত হত্যাকা- ও নাশকতা মামলার বিচার এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত’৭২ সংবিধান বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১৯৯৭ খ্রি. থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সাতক্ষীরাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য এলাকার নদীগুলো রক্ষা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম ব্যবস্থা চালুর জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। ফলে কপোতাক্ষ নদ ও বেতনা নদী খনন কার্যক্রম হয়। কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম পদ্ধতি চালু হয় যার ফলাফলও ভালো। কিন্তু অন্যান্য নদীগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নদীগুলো কেটে ছোট খালে পরিণত করা হচ্ছে। যার ফলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ না হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী দেশের সম্পত্তি দখল ও লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। ব্যাংক লুটের এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। তাদের নামে মামলা হলেও কোন বিচার হচ্ছে না। আজ এসব ব্যবস্থার কারণে এক শ্রেণির মানুষ লুটপাট ও দুর্নীতি করে অর্থসম্পদের মালিক হচ্ছে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। দিন দিন ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে।
সবশেষে নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তারা ৪ মার্চের সমাবেশকে সফল করার জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার জন্য আহবান জানান।